Wednesday, June 18, 2025
Ad

কুলতলীতে বাঘে আক্রান্ত পরিবার পেল পাঁচ লক্ষ টাকার ক্ষতিপূরণ।

Must read

The tiger-hit family in sundarban received compensation of five lakh rupees.

হাসান লস্কর, সুন্দরবন: মৎসজীবীদের ক্ষোভকে বাড়তে না দিয়ে ভোটের দুদিন আগে বাঘের আক্রমনে নিহত মৎসজীবী অমল দন্ডপাটের বিধবা পত্নী তপতী দন্ডপাটকে রাজ্য বনদপ্তর ক্ষতিপূরণ হিসাবে ৫ লক্ষ টাকার চেক দিল। বাঘের আক্রমণে নিহত আরেক মৎসজীবী দিলীপ সর্দারের বিধবা পত্নী শেফালি সর্দার আজ ক্যানিং বনদপ্তরের অফিসে আসতে না পারায় তাকে সোমবার চেক দেবে বলে ক্যানিং বনদপ্তর জানিয়ে দিয়েছে এপিডিআর এর প্রতিনিধিদের। এর আগে আদালত আদেশ দেওয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই ক্ষতিপূরণের চেক দিয়ে দিয়েছে বন দপ্তর। এবার দেরি করায় মৎসজীবীদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। APDR এর মাধ্যমে তারা বন দপ্তরে মিছিল করে গিয়ে গণ ডেপুটেশন দেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করে। বন দপ্তর আজ ক্ষতিপূরণ দিয়ে দেওয়ায় মৎসজীবীদের নিয়ে সেই কর্মসূচি আর করবে না এপিডিআর।

প্রসঙ্গত, গত ৭ মে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্যের এজ্লাসে সুন্দরবনে বাঘের আক্রমণে নিহত দুজন মৎসজীবীর বিধবা (বাঘ বিধবা) স্ত্রীদের সরকারি ক্ষতিপূরণের দাবীতে মামলার শুনানি হয়। দুটি মামলাতেই বিচারপতি রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন, চার সপ্তাহের মধ্যে আবেদনকারীদের পাঁচ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ নি:শর্তে মিটিয়ে দিতে হবে। আবেদনকারীদের তরফে আইনজীবী ছিলেন কৌশিক গুপ্ত এবং শ্রীময়ী মুখার্জি।

প্রথম আবেদনকারীর নাম শেফালী সর্দার। কুলতলির কাটামারি এলাকার বাসিন্দা। তিনি আদালতে আবেদন করে জানান, তার স্বামী প্রয়াত দিলীপ সর্দার সুন্দরবনের জঙ্গলে ২০২২ সালের ১২ই নভেম্বর বাঘের আক্রমণে মারা গেছেন। তিনি সুন্দরবনের নদীতে মাছ ও কাঁকড়া ধরার জন্য বনদপ্তরের বৈধ অনুমতিপত্র (BLC) নিয়ে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন । সেখানে তিনি বাঘের আক্রমণে নিহত হন। কিন্তু প্রায় দু বছর ধরে বনদপ্তর সহ সমস্ত সরকারি দপ্তরে আবেদন নিবেদন করেও তিনি কিছুতেই কোন ক্ষতিপূরণ পাননি। তাই আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। আদালতে রাজ্য সরকারের আইনজীবী পোস্টমর্টেম রিপোর্ট দেখিয়ে বলেন যে পোস্টমর্টেম রিপোর্টে বলা আছে যে মাথায় আঘাত পেয়ে দিলীপ সরদার মারা গেছে। কাজেই বাঘের আক্রমণেই মারা গেছে এটা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তাঁর এই বক্তব্যের উত্তরে বিচারপতি পোস্টমর্টেম রিপোর্টের পুরোটা পড়ে শোনান এবং পুলিশ রিপোর্ট পড়ে শোনান। পুলিশ রিপোর্টে পরিষ্কার বলা আছে বাঘের আক্রমণে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে এবং পুলিশই মৃতদেহ উদ্ধার করে এনে হাসপাতালে ভর্তি করেছিল। পোস্টমর্টেম রিপোর্টের অন্য অংশে এটাও পরিষ্কার করে দেওয়া আছে যে বাঘের আক্রমণে দিলীপ সরদারের মৃত্যু হয়েছে। কাজেই সরকারের ঘোষিত নীতি অনুযায়ী অবশ্যই পাঁচ লক্ষ টাকার ক্ষতিপূরণ দিলীপ সরদারের বিধবা স্ত্রীর প্রাপ্য। কাজেই আবেদনকারীকে আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে প্রাপ্য ক্ষতিপূরণ ৫ লক্ষ টাকা অবশ্যই মিটিয়ে দিতে হবে।
দ্বিতীয় মামলায় আবেদনকারী ছিলেন মইপিটের বাঘ বিধবা তপতী দণ্ডপাট। তিনি আদালতে আবেদন করে জানান যে তার স্বামী অমল দণ্ডপাট রাজ্য বনদপ্তরের অনুমতিপত্র ( বিএলসি) নিয়ে মাছ ও কাঁকড়া গিয়েছিলেন সুন্দরবনের নদীতে। কিন্তু ৩০ শে ডিসেম্বর ২০২১ তাদের নৌকাতে বাঘ হামলা চালায়। অন্যরা পালিয়ে গেলেও অমলবাবু বাঘের আক্রমণে গুরুতর আহত হন। তারপরে পয়লা জানুয়ারি ২০২২ তিনি মারা যান। এই মামলার ক্ষেত্রে সরকারি উকিলের বক্তব্য ছিল যে অমল দণ্ডপাট সরকারি নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করে নিষিদ্ধ ‘কোর’ এলাকায় ঢুকেছিল। কাজেই তাকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিত নয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে আবেদনকারীর আইনজীবী কৌশিক গুপ্ত আদালতকে স্মরণ করিয়ে দেন, এই আদালতের আদেশ আছে যে কোর এলাকা বা সাধারণ এলাকা যেখানেই বাঘের আক্রমণে কেউ মারা যাবে তারই সরকারি ক্ষতিপূরণ প্রাপ্য হবে। কাজেই তিনি ‘কোর’ এলাকায় ঢুকে ছিলেন কিনা বা ‘কোর’ এলাকায় মারা গেছিলেন কিনা বা তার জঙ্গলের যাওয়া আইনি ছিল কী ছিল না – এটা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য এটা দেখার কোন ব্যাপার নেই। অমল দণ্ডপাট বাঘের আক্রমণেই মারা গিয়েছিল পোস্টমর্টেম রিপোর্ট এবং অন্য সমস্ত কাগজপত্র থেকে এটা পরিষ্কার। কাজেই ক্ষতিপূরণ তার বিধবা স্ত্রী তপতীদেবীর অবশ্যই প্রাপ্য। কৌশিক বাবুর এই সওয়াল মেনে বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য বলেন, প্রান্তিক এলাকার দরিদ্র মানুষ জীবিকার প্রয়োজনে জঙ্গলে গিয়েছিল, মাছ ধরতে গিয়েছিল এটা পরিষ্কার। এবং এক্ষেত্রে সে অনুমতি নিয়েই গিয়েছিল। কাজেই সরকারি নিয়ম অনুযায়ী অবশ্যই তার ক্ষতিপূরণ প্রাপ্য। বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য তার আদেশে বলেন, অমল দণ্ডপাটের বিধবা স্ত্রী তপতী দণ্ডপাটের সরকারি নিয়ম মত ক্ষতিপূরণ অবশ্যই প্রাপ্য এবং সরকারকে আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে ঘোষিত পাঁচ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ অবশ্যই মিটিয়ে দিতে হবে।

প্রসঙ্গত মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর এর দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা কমিটির উদ্যোগে এই মামলাগুলো পরিচালিত হয়। সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে বাঘে আক্রান্ত পরিবার গুলোকে খুঁজে এনে আদালতের দরজায় পৌঁছে দেওয়ার অসাধারণ ও কষ্টকর কাজটি দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলা কমিটির সদস্যরা লাগাতার করে চলেছেন। এপিডিআর এর উদ্যোগেই গতবছর প্রথম হাইকোর্টে ক্ষতিপূরণের মামলা হয়েছিল এবং এই সব্যসাচী ভট্টাচার্যের এজলাসেই 5 লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ এর আদেশ হয়েছিল এবং সেই আদেশে সব্যসাচী ভট্টাচার্য পরিষ্কার করে জানিয়ে দিয়েছিলেন কোর এলাকা হোক বা সাধারণ এলাকা হোক, বাঘের আক্রমণে মৃত্যু হলে ক্ষতিপূরণ দিতেই হবে। যদি জীবিকার প্রয়োজনে আইন ভেঙেও কোন মানুষ বনে ঢুকে থাকে বা নদীতে মাছ বা কাঁকড়া ধরতে গিয়ে থাকে এবং বাঘের আক্রমনে মারা যায় তাহলেও রাজ্য সরকারকে তার মৃত্যুর জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এক্ষেত্রে দ্বিধাদ্বন্দ্বের কোন অবকাশ নেই। তার সেই আদেশ উদাহরণ হিসেবে সামনে এনেই আজকের এই মামলা দুটি পেশ হয়। এপিডিআর এর তরফে প্রথম মামলাটিও করেছিলেন আইনজীবী কৌশিক গুপ্ত এবং আইনজীবী শ্রীময়ী মুখার্জী। এই আদেশ কার্যকর হলে আদালতের আদেশে মোট পাঁচজন বাঘ বিধবা ৫ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ পাবেন।
এখনও বহু বাঘ-বিধবা বাকি আছেন যারা কোন ক্ষতিপূরণ পাননা। মৃতদেহ খুঁজে পাওয়া যায়নি বলে এমনকি সরকারি বিধবা ভাতাটুকুও পায় না।
কাজেই সুন্দরবনের মানুষের মানবাধিকার রক্ষার জন্য এপিডিআর এর লড়াই চলবে। আদালতের লড়াই ও রাস্তার আন্দোলন পাশাপাশি এগিয়ে নিয়ে যাবে এপিডিআর। এপিডিআর চায়, বাঘের আক্রমনে মৃত ও আহতের সংখ্যা কমানোর জন্য বনদপ্তর দ্রুত উদ্যোগ নিক এমনই দাবি এপিডিআর।

- Advertisement -

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -

Latest article