Thursday, June 19, 2025
Ad

বালুরঘাট এক্সপ্রেস কাণ্ডে উত্তেজনা, অভিযোগ দায়ের ভুক্তভোগী বৃদ্ধের।

Must read

দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি।

নিজস্ব প্রতিনিধি, মুর্শিদাবাদ: বালুরঘাট এক্সপ্রেসে ঘটে যাওয়া এক চাঞ্চল্যকর ঘটনার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হতেই ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। বিষয়টি নজরে আসতেই তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সহ-সভাপতি মইনুল হক দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। ঘটনার খবর পেয়ে তিনি তৎক্ষণাৎ ফারাক্কায় ফিরে আসেন। সেখানে পৌঁছে তিনি সরাসরি ভুক্তভোগী বৃদ্ধার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং তাঁর কাছ থেকে ঘটনার বিস্তারিত তথ্য নেন।
ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে মইনুল হক বলেন, “এ ধরনের ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত একান্ত জরুরি। প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করে আইনানুগ শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। একই সঙ্গে রেল পুলিশকে আরও সক্রিয় হতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে এমন কোনো অমানবিক ঘটনা না ঘটে।” প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান।এই ঘটনায় দক্ষিণ মালদার সাংসদ ইশা খান চৌধুরী জানান, যদি ওই মেয়েটি মনে করেন যে তার কোনও অশ্লীল ভিডিও বা ছবি অন্য ব্যক্তিটির ফোনে রয়েছে তাহলে তার জন্যে সাইবার ক্রাইম বিভাগ রয়েছে। সেখানে তিনি অভিযোগ করতে পারেন। ফরাক্কার বিধায়ক মনিরুল ইসলাম জানান, আমি তার বাড়ি গিয়ে ঘুরে এসেছিলাম। আমার বিশ্বাস যে ভদ্রলোকটির বিরুদ্ধে মহিলাটি অভিযোগ করেছেন যে বয়স্ক লোকটি তার ফটো বা ভিডিও তুলেছেন। একজন বয়স্ক মানুষ এইধরনের কাজ করবেন বলে মনে হচ্ছে না। তরুণী যেভাবে আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছেন তার কঠোর শাস্তি দাবি করেছেন।প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়াচ্ছে নবদ্বীপ ধাম বালুরঘাট এক্সপ্রেস কামরার একটি ভিডিও। যেখানে দেখা গেছে একজন বয়স্ক যাত্রী ট্রেনের সিটে বসে আছেন। ভাইরাল ভিডিওতে দেখা গেছে একজন মহিলা বরাবর সেই বয়স্ক যাত্রীর গালে চড় থাপ্পড় মেরে চলেছেন। ওই মহিলার অভিযোগ, ওই বয়স্ক যাত্রী নাকি তার ভিডিও করছিলেন। ট্রেনের আর এক যাত্রী মারধরের সম্পূর্ণ ঘটনা ফোনে ভিডিও রেকর্ড করে সামাজিক মাধ্যমে ছড়ায় এবং ভিডিও ভাইরাল হতে না হতেই নিন্দার ঝড় ওঠে সোশ্যাল মিডিয়ায়। বহু গুণীজন সামাজিক মাধ্যমে নানান মত প্রকাশ করেছেন। জানা গেছে, ওই ব্যক্তির বাড়ি মুর্শিদাবাদ জেলার ফরাক্কার তোফাপুর গ্রামে। নাম মাফিকুল ইসলাম (কালু)। তিনি মালদা জেলায় আয়ুর্বেদিক ওষুধ বিক্রির জন্যে ধুলিয়ান স্টেশন থেকে মালদার পথে যাচ্ছিলেন।ফরাক্কার পর থেকে শুরু হয় এই ঘটনা। তার সাথে আরও কয়েকজন সঙ্গী সাথীরা ছিলেন, তবে তিনি একাই অন্য কামরায় ছিলেন। মাফিকুলের এক কাজের সঙ্গী চন্দারাণী দাস বলেন, আমরা পাশের কামরায় ছিলাম। এসে দেখি বাবার বয়সি একটা লোককে মারছে ট্রেনে থাকা কেউই তার প্রতিবাদ করেননি। তবে মেয়েটারই দোষ ছিল। কিভাবে কখন ফোনের ক্যামেরা চালু হয়ে যায় সেটা ওই বয়স্ক ব্যক্তি বুঝতে পারেনি। বহুক্ষণ ভিডিও হয়েছে তার মধ্যে ওই মহিলার মুখ ভিডিওতে দেখা যায়নি। শুধুমাত্র ট্রেনের কামরা ও তার হাতের কিছু অংশ সেই ভিডিওতে দেখা গিয়েছে। এমনকি মেয়েটির বাবাও নিষেধ করছিলেন তাকে। কিন্তু তার মেয়ে কিছুই শোনেননি। আমরা একইসাথে কাজ করি, উনি খুব ভালো মানুষ। ফোন সম্পর্কে এতকিছু জানেনা বলেই এই ঘটনা।অন্যদিকে ভিডিও ছড়াতেই তোলপাড় সামাজিক মাধ্যম থেকে শুরু করে রাজ্য রাজনীতিতেও। নিগৃহীত যাত্রী মাফিকুল ইসলাম জানান, মোবাইল সম্বন্ধে আমার বিশেষ অভিজ্ঞতা নেই। ওই তরুণী ফোনে কারও সাথে কথা বলছিলেন। হঠাৎ আমাকে কি করছেন কি করছেন বলে মোবাইলটা কেড়ে নিলেন। তারপর আমার মোবাইলটা নিয়ে আছাড় মারে, আমি জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে বলুন। তিনি বলতে লাগলেন ভিডিও করছো, ভিডিও? এরপর শুরু করে গালিগালাজ ও মারধর। গালে লাগাতার থাপ্পড় মারতে থাকেন। আমাকে কোন কথা বলার সুযোগই দেইনি। ট্রেনের জিআরপি কে ডাকা হয়। তারা এসে আমাকে ও মেয়েটিকে নিয়ে যায়। ওই মেয়েটিকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেন জিআরপি, তাদেরও কোন কথা শোনেননি। আমি ভীষণভাবে আতঙ্কিত হয়েছি। অনিচ্ছাকৃত আমার সাথে যা ঘটেছে তার জন্যে অপমানিত বোধ করছি। জানাগেছে, মেয়েটি রঘুনাথগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা। পিয়ালী হাজরা (১৮)। অবশেষে মাফিকুল ইসলাম শুক্রবার ফারাক্কা থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।

মাফিকুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে নিউ ফারাক্কা জিয়ারপির কাছে তৃণমূল কংগ্রেসের একটি প্রতিনিধি দল।

রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী নিজের ফেসবুক পেজে ট্রেনের ঘটনার ভিডিও সহ আচরণকে সমর্থন করে কুর্নিশ জানিয়েছেন। তার এই পোস্ট মুহূর্তে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে ভুক্তভোগী মাফিকুল ইসলামের এক সঙ্গী চিন্ময় বলেন, এই ঘটনা শুভেন্দু অধিকারী হিন্দু-মুসলিম করে একটা বিভাজন তৈরি করার চেষ্টা করেছেন। এটা করা একদম ঠিক হয়নি। মাফিকুলের সাথে আমরা একসঙ্গে কোম্পানির কাজ করছি তো তার বিরুদ্ধে কোনোরকম অভিযোগ আমরা শুনতে পাইনি। বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী বলেন, ঐ মহিলা কিন্তু পুলিশের কাছে এখন পর্যন্ত কোন লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন নি। তিনি আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে ঐ বৃদ্ধ মানুষটির সাথে জঘন্য আচরণ করেছেন। ওইসময় মানুষটি গণপ্রহারের শিকারও হয়ে যেতে পারতেন। রেল পুলিশ, রাজ্য প্রশাসনের ভূমিকা কি? কোন তদন্ত শুরু করেছে? উল্টে ডিজিটাল মিডিয়াগুলিকে, যারা এই খবর করেছে, তাদের সাংবাদিকদের পুলিশ ফোন করছে ও এই ভিডিও মুছে দিতে চাপ দিচ্ছে। এটা তো সরাসরি গণমাধ্যমের কন্ঠরোধ করার অপচেষ্টা। এইভাবে ডিজিটাল মিডিয়াগুলিকে খবর চেপে দেওয়ার অপপ্রয়াস কে নিন্দা জানাচ্ছি। খবরে দেখেছি, ঐ মহিলাকে চিহ্নিত করাও গেছে। অবিলম্বে ঐ মহিলার বিরুদ্ধে আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে হবে। নিজেকে আইন-আদালত-বিচারব্যবস্থা- পুলিশ -প্রশাসন তথা আইনকানুনের উর্ধ্বে তুলে তিনি অতি গর্হিত অন্যায় করেছেন। এইরকম ঘটনা কোনমতেই বরদাস্ত করা যাবে না।

- Advertisement -

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -

Latest article