ট্যাব কেলেঙ্কারিতে বিহারের যোগ। Disappointed students not getting tab money.
নিউজ ডেস্ক, নিউজ দিগন্ত বার্তা: এবার দ: ২৪ পরগনাতেও ট্যাব কেলেঙ্কারিতে বিহারের যোগ পাওয়া গেল। ‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্পে রাজ্য সরকারের দেওয়া একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর পড়ুয়াদের ট্যাবের টাকা নিয়ে বিস্তর গরমিলের অভিযোগ জেলা জুড়ে। এই জেলার প্রায় সাড়ে ৩০০ পড়ুয়ার ট্যাবের টাকা অন্যের অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে বলে জেলা বিদ্যালয় সংসদ সূত্রে জানা গেছে। জেলার প্রায় ৩৫টি স্কুলের পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে এই ঘটনা ঘটেছে। এই তালিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার সাগর, গোসাবা, কুলতলি থেকে শহরতলি সোনারপুর, বারুইপুর, বজবজ ও মহেশতলার একাধিক স্কুলের নাম আছে। ট্যাব নিয়ে গরমিল সামাল দিতে জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) নজরুল হক সিপাই জেলাশাসক সুমিত গুপ্তার সঙ্গে জরুরী বৈঠক করেছেন। জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক নজরুল হক সিপাই জানিয়েছেন, ‘প্রত্যেক স্কুলকে থানায় অভিযোগ জানাতে বলা হয়েছে।’
ট্যাব কেনার টাকা না পাওয়ায় হতাশ ছাত্রছাত্রীরা। তবে তদন্ত করে যাতে দ্রুত বঞ্চিত ছাত্রছাত্রীদের ট্যাবের টাকা ফেরত দেওয়া যায় তার দাবি তুলেছেন স্কুল কর্তৃপক্ষগুলো। রাজ্যের পড়ুয়াদের ট্যাব কেনার টাকা দিচ্ছে রাজ্য সরকার। কিন্তু সেই টাকা চলে যাচ্ছে অন্যের অ্যাকাউন্টে। একজন নয়, একাধিক পড়ুয়ার সঙ্গে ঘটেছে এমন ঘটনা। একাধিক স্কুল থেকে এই অভিযোগ আসতেই ওই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
স্কুল সূত্রের খবর, সাগরের মহেন্দ্রগঞ্জ হাইস্কুলের ৩১ জন পড়ুয়ার টাকা অন্যের অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে বলে থানায় অভিযোগ করেছেন বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শ্যামল বালা। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান বিহারের অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে এই টাকা। সহকারী শিক্ষক শ্যামল বালা বলেন, ‘আমাদের স্কুলের ৩১ জন ছাত্রছাত্রীর টাকা অন্য অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার হয়ে গিয়েছে। জানতে পারার পর ব্যাঙ্কে গিয়ে খোঁজখবর নিয়ে অ্যাকাউন্ট নম্বর মিলিয়ে দেখা হয়েছে। ছেলে মেয়েদের ট্যাব কেনার জন্য সরকারি টাকা যদি এভাবে নয় ছয় হয়, তাহলে অবশ্যই তদন্ত করে দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তি দেওয়া উচিত। বঞ্চিত ছেলে-মেয়েরা তাদের ট্যাব কেনার টাকা যাতে ফেরত পায়, সেদিকটা মানবিকতার সঙ্গে রাজ্য শিক্ষা দপ্তরের দেখা উচিত।’ এছাড়াও সাগরের কোম্পানিরছাড় হাইস্কুল, মনসাদ্বীপ রামকৃষ্ণ মিশন ও সুন্দরবন জনকল্যাণ স্কুলের পড়ুয়াদের টাকাও অন্য অ্যাকান্টে গেছে। মগরাহাটের চকপরান কাঁটাখালি বেলমনি গার্লস হাইস্কুলের ১২ ও কুলপির মদনমোহনপুর আরসিএস বিদ্যামন্দির স্কুলের ১৫ জনের টাকা অন্যত্র ঢুকেছে। এই দুই স্কুলের ক্ষেত্রেও টাকা ঢুকেছে বিহারের কিশানগঞ্জ ও ভগবানপুর এলাকার অ্যাকাউন্টে। কুলপির মদনমোহনপুর আরসিএস বিদ্যামন্দিরের ক্লার্ক সমীরণ রায় বলেন, ‘ছাত্র-ছাত্রীদের অ্যাকাউন্টে টাকা না আসার পর আমরা ব্যাঙ্কে গিয়ে খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারি আমাদের স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের পরিবর্তে যে একাউন্ট গুলোতে টাকা ঢুকেছে সেগুলো আমাদের রাজ্যের নয়। ওই অ্যাকাউন্ট নাম্বার গুলো বিহারের কিষানগঞ্জ এলাকার দেখাচ্ছে। ওই অ্যাকাউন্ট গুলোর যে আইএফসি কোড দেখাচ্ছে সেগুলো এ রাজ্যের আইএফসি কোড নয়। বিষয়টি জানতে পারার পর স্কুলের পক্ষ থেকে পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ জানানো হয়েছে।’ অন্যদিকে মগরাহাটের কাঁটাখালি বেলমনি গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা এনাক্ষী পাল মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘আইএফসি কোড ধরে চেক করে আমি জানতে পারি আমাদের স্কুলের বেশ কিছু ছাত্রীদের টাকা ঢুকেছে বিহারের ভগবানপুর এলাকায়। এছাড়া আরও বেশ কিছু ছাত্রীর টাকা আমাদের রাজ্যের অন্যান্য জেলার অ্যাকাউন্টে ক্রেডিট হয়েছে। পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েছি। তদন্ত করে পুলিশ যেন অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে যথাযথ শাস্তি দেয়। আর যাতে বঞ্চিত ছাত্র-ছাত্রীরা তারা তাদের টাকা অ্যাকাউন্টে ফেরত পায় তার জন্য আবেদন জানিয়েছি জেলা এবং রাজ্য শিক্ষা দপ্তরে।’