রেকর্ড গঙ্গাসাগর মেলা ২০২৪
লতা পুরকাইত, সাগর: গত ৮ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া পবিত্র গঙ্গা সাগর মেলা সাগর তট পরিচ্ছন্নতার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে। এ পর্যন্ত মকর সংক্রান্তির শুভ সময়ে গঙ্গাসাগরের সঙ্গমস্থলে ১কোটি দশ লক্ষ তীর্থযাত্রী কপিল মুনি দর্শন করেছেন। রাজ্যের প্রতিমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস উপরোক্ত দাবি করেছেন এবং বলেছেন যে এটি গঙ্গা সাগরের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত একটি রেকর্ড। সাগরদ্বীপে সাগর পরিচ্ছন্ন অভিযানে মন্ত্রী এই দাবি করেন। এই হাড়কাঁপানো ঠান্ডায় গঙ্গাসাগরে পবিত্র স্নানে অংশ নিতে দেখা গেছে ব্যাপক প্রবীণদেরও। গঙ্গা সাগরে আগত অনেকেই জানান, এত বড় মেলার আয়োজন করা হলেও এ মেলা জাতীয় মেলার মর্যাদা পাচ্ছে না। পশ্চিমবঙ্গের বিদ্যুৎ, আবাসন, যুব বিষয়ক ও ক্রীড়া দফতরের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস মঙ্গলবার দাবি করেছেন যে এই আট দিনে ১ কোটি ১০ লক্ষ ভক্ত পবিত্র মকর সংক্রান্তির সময় গঙ্গা সাগর মেলায় স্নান করেছেন এবং কপিল মুনির আশ্রমে পুজো করেছেন। তিনি বলেন, এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভক্ত ছিলেন উত্তরপ্রদেশ, বিহার, মধ্যপ্রদেশ এবং ঝাড়খন্ড থেকে। মঙ্গলবার গঙ্গাসাগর ৬নং তটে এক সাংবাদিক সম্মেলনে একথা জানানো হয়।
এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুৎ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, কৃষি মন্ত্রী শোভন দেব চট্টোপাধ্যায়, সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী বঙ্কিমচন্দ্র হাজরা, পরিবহন মন্ত্রী স্নেহাশীষ চক্রবর্তী, দমকল মন্ত্রী সুজিত বোস, তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন এবং জনস্বাস্থ্য কারিগরী বিভাগের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারী সুরেন্দ্র গুপ্তা, জেলাশাসক সুমিত গুপ্তা, সুন্দরবন জেলা আরক্ষাধ্যক্ষ কোটেশ্বর রাও প্রমুখ। সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনায় তীর্থযাত্রীরা স্নান ও কপিল মুনির আশ্রমে পূজা অর্পণ করে নিরাপদে ফিরে যাচ্ছেন। মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি মূহুর্তে নজরদারী এবং তাঁর নির্দেশমত মন্ত্রীগন, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গুলি সক্রিয় ভাবে কাজ করার জন্যই গঙ্গাসাগর মেলাকে অতি সুশৃঙ্খল ও নিরাপদ করা সম্ভব হয়েছে বলে দাবি করেছেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস।
সাংবাদিক সম্মেলনে আরো জানানো হয় এখনো পর্যন্ত ১৩৬৭২ জন আগত তীর্থযাত্রী তাদের আত্মীয় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল, পুলিশ, প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তৎপরতায় ১৩৬৫১ জনকে তাদের পরিবারের সাথে মিলিয়ে দেওয়া হয়েছে।এপর্যন্ত ২৯৭ জন তীর্থযাত্রী সাগরদ্বীপের বিভিন্ন হাসপাতালে অসুস্থতার কারণে ভর্তি হয়েছেন এবং ৩০৪২ জন তীর্থযাত্রীকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ৫১ জন তীর্থযাত্রীকে উন্নততর পরিষেবার জন্য কলকাতার বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। মোট ৮ জন অসুস্থ তীর্থযাত্রীকে এয়ার লিফটের মাধ্যমে জরুরী ভিত্তিতে কলকাতার এম. আর. বাঙ্গুর হাসপাতালে (৭ জন) ও এস. এস. কে. এম. হাসপাতালে (১ জন) এবং ওয়াটার অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে কাকদ্বীপ মহকুমা হাসপাতালে মোট ৭ জন অসুস্থ তীর্থযাত্রীকে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। গঙ্গাসাগর মেলায় আগত তীর্থযাত্রীদের মধ্যে সাগরে আসার পথে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। মোহন লাল প্রজাপত, ৫৯ বছর বয়স, রাজস্থান। চন্দ্রপাল, ৫১ বছর বয়স, দিল্লী। ওম প্রকাশ, ৬৮ বছর বয়স, সিরসা, হরিয়ানা।
শেষ হবার পাওয়া পর্যন্ত ৪২৩ টি পকেটমারীর ঘটনা ঘটেছে যার ৪০২ টি ক্ষেত্রে খোয়া যাওয়া বস্তু উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে ও ৮৭৬ জনকে বিভিন্ন অপরাধমূলক জনিত কারনে গ্রেফতার করা হয়েছে। “শুদ্ধিকরণ প্রতিবার, গঙ্গাসাগরের অঙ্গীকার”- এই স্লোগানকে সামনে রেখে যে গঙ্গাসাগর মেলার সূচনা করা হয়েছিল আজ তা শেষের পথে। মঙ্গলবার ৬নং সমুদ্রতটে দক্ষিন ২৪ পরগণা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গঙ্গাসাগর সাফাই অভিযান করা হয়েছে এবং সমুদ্রতটকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। প্রশাসনের তরফে সবার কাছে আবেদন করা হয় সমুদ্রতট পরিষ্কার রাখুন। আসুন, পরিবেশ বান্ধব সমুদ্রতট গড়ে তুলি।