নিজস্ব সংবাদদাতা, রায়দিঘি : সোনারপুরের পর এবার রায়দিঘিতে একটি সমবায় ব্যাঙ্কে এক কোটি টাকার বেশী আর্থিক তছরুপের ঘটনা প্রকাশ্যে চলে এল। ওই সমবায় ব্যাঙ্কের হেড অফিসের ম্যানেজার ও একটি শাখার ইনচার্জের বিরুদ্ধে এই আর্থিক তছরুপের অভিযোগে সরব হয়েছেন ব্যাঙ্কের শেয়ার হোল্ডার ও গ্রাহকেরা। ইতিমধ্যে সমবায় ব্যাঙ্কের উর্ধতন কর্তৃপক্ষ, মথুরাপুর ২নং ব্লকের বিডিও ও রায়দিঘি থানাতে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন গ্রাহকেরা। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা সমবায়ের রেজিস্ট্রারের পক্ষ থেকে শুরু হয়েছে তদন্ত। কিন্তু ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর থেকে গা ঢাকা দিয়েছেন সমবায় ব্যাঙ্কের কাশীনগর শাখার ইনচার্জ মোহনলাল হালদার। অভিযুক্ত মোহনলাল হালদার কাশীনগর পশ্চিম পাড়ার তৃণমূলের বুথ সভাপতি বলে জানাগেছে। আর্থিক তছরুপের তথ্য প্রকাশ্যে আসতেই ব্যাঙ্কের দু’হাজারের বেশী আমানতকারী আতঙ্কিত।
রায়দিঘি বিধানসভার অন্তর্গত খাঁড়ি ইউনিয়ন লার্জসাইজ প্রাইমারি এগ্রিকালচারাল কোঅপারেটিভ ক্রেডিট সোসাইটি লিমিটেড ৬৬ বছরের পুরনো। মূলত কৃষি সমবায় দিয়ে যাত্রা শুরু হয় এই সংস্থার। বর্তমানে ব্যাঙ্কের চারটি শাখা আছে। রাজ্য সমবায় ব্যাঙ্কের মাধ্যমে পরিচালিত হয় এই কৃষি সমবায়টি। ব্যাঙ্কের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও প্রাক্তন সম্পাদক শিবপ্রসাদ গোস্বামীর অভিযোগ, ‘২০২২- ২৩ আর্থিক বর্ষে অডিট রিপোর্টে এই আর্থিক তছরুপ ধরা পড়েছে। কাশীনগর শাখার ইনচার্জ মোহনলাল হালদার ভুয়ো অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ১ কোটি ১১ লক্ষ ৪৩ হাজার ৭৫৬ টাকা তছরুপ করেছে। এরসঙ্গে ব্যাঙ্কের অনেক কর্মীও জড়িত আছে বলে দাবি। এরা সকলেই তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্ব। বিষয়টি জানার পরেই আমরা সমবায়ের সমস্ত দপ্তরের পাশাপাশি স্থানীয় বিডিও ও পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছি। আমরা চাই গ্রাহকদের কষ্টার্জিত টাকা যেন ফেরত আসে। আর যারা এই আর্থিক তছরুপের সঙ্গে যুক্ত তাদেরকে চিহ্নিত করে যেন শাস্তি দেওয়া হয়।’
এই আর্থিক বেনিয়মের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন ব্যাঙ্কের কাশীনগর শাখার বর্তমান ক্যাশিয়ার মোহন কয়াল। তিনি জানান, ‘বিষয়টি ব্যাঙ্কের নজরে এসেছে। আমরাও চাইছি যথাযথ তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেওয়া হোক।’তবে সমবায় ব্যাঙ্কের কাশিনগর শাখার ইনচার্জ অভিযুক্ত মোহনলাল হালদার গত দু’মাস বাড়িছাড়া বলে জানিয়েছেন তাঁর মা বন্দনা হালদার। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে একা কাজ করেনি। ব্যাঙ্কের আরও লোকজন এর সাথে জড়িত। যথাযথ তদন্ত হোক। আসল সত্য প্রকাশ্যে চলে আসবে।’ অন্যদিকে খাঁড়ি এলাকায় সমবায়ের হেড অফিসে গিয়ে ম্যানেজার শ্রীকৃষ্ণ মণ্ডলের দেখা পাওয়া যায়নি। তিনি অফিসে ছিলেন না। একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। এমনকি এসএমএস করা হলে তিনি পাল্টা এসএমএস করে জানান ফোনে কথা বলবেন না। আগামী মঙ্গলবার অফিসে গেলে তিনি কথা বলবেন। এই সমবায়ে গত দু’বছর কোনও নির্বাচন হয়নি বলে অভিযোগ তুলেছেন গ্রাহকদের বড় অংশ। সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকায় এই সমবায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন বিজেপির মথুরাপুর সংগঠনিক জেলার সম্পাদক দিলীপ জাতুয়া ও রায়দিঘির প্রাক্তন বিধায়ক তথা সিপিএম নেতা কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়।
কান্তি বাবু বলেন, ‘দোষীদের বিরুদ্ধে এফআইআর করে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। এমনকি তছরুপের টাকা ফেরতের পাশাপাশি গ্রাহকদের আমানত সুনিশ্চিত করতে হবে।’ অন্যদিকে রায়দিঘির বর্তমান বিধায়ক অলোক জলদাতা জানিয়েছেন, ‘বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। যারা দোষী তাদের চিহ্নিত করে জেলা সমবায় কর্তৃপক্ষ নিশ্চয়ই আইনানুগ ব্যাবস্থা নেবে। দলের কোন বিষয় নেই এরমধ্যে। মোহনলাল আগে কাশিনগর অঞ্চলের বুথের সভাপতি থাকলেও এখন আর নেই।’