কেন্দ্রকে কড়া বার্তা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
কেন্দ্র যখন বাংলার বকেয়া অর্থ আটকে রেখে রাজনীতি করছে, বাংলার মানুষের জীবন-জীবিকার সঙ্গে ছিনিমিনি খেলছে, বাংলা তবু হাত পাতবে না। আমরা গড়ি, আমরা পরিষেবা দিই, আমরা এগোই, আমরা বেড়ে উঠি, সাহায্য পাই আর না পাই। সংসদে দাঁড়িয়ে বলেন অভিষেক।
নিজস্ব সংবাদদাতা, নয়াদিল্লি: বৃহস্পতিবার সংসদে বক্তৃতা দিতে গিয়ে অভিষেক ব্যাখ্যা করেন, কেন্দ্র সরকার জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের উপর উচ্চ হারে জিএসটি চাপিয়ে মানুষের প্রকৃত আয় কমিয়ে দিয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন যে, কেন্দ্র একদিকে স্বস্তির মরীচিকা তৈরি করছে, অন্যদিকে পরোক্ষ করের বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে। স্বাস্থ্যখাতে বাজেট কমানো থেকে শুরু করে রেল বাজেটের অনুপস্থিতি ও কৃষকদের ঋণ মকুবের ক্ষেত্রে কোনো স্বস্তি না দেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপির “ভাষণ-জুমলা-প্রোপাগান্ডা” সরকার-এর তীব্র সমালোচনা করেন, যা “অর্ধ-সত্য, অর্ধ-মন্ত্রী এবং অর্ধেক জবাবদিহি” দ্বারা পরিপূর্ণ। তিনি এনডিএ শাসিত বিহার ও তৃণমূল শাসিত বাংলার তুলনা টেনে দেখান যে কীভাবে “বাংলা বিরোধী বাজেট” সত্ত্বেও বাংলা আত্মনির্ভরতা প্রতিষ্ঠায় পিছিয়ে থাকেনি। তিনি জনগণনার গুরুত্ব নিয়েও জোর দেন এবং বলেন, “জনগণনা না হলে, প্রতিটি নীতি, আয়কর স্ল্যাবের সংশোধন এবং অর্থনৈতিক পূর্বাভাস নিছক অন্ধ অনুমান এবং জুয়া ছাড়া আর কিছুই নয়।”সংসদে ‘পপ কালচার’ এর উদাহরণ দিয়ে তীব্র আক্রমণ শানান তিনি। তাঁর ৩০ মিনিটের বক্তব্যে অভিষেক রাজকুমার হিরানির ২০০৯ সালের ব্লকবাস্টার ‘৩ ইডিয়টস’-এর স্বৈরাচারী চরিত্র ভাইরাসের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের তুলনা করেন। তাঁর বক্তৃতার শেষ পর্যায়ে, কেন্দ্রীয় সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলিউড সুপারস্টার শাহরুখ খানের সেই বিখ্যাত সংলাপ স্মরণ করিয়ে দেন “ডোন্ট আন্ডারএস্টিমেট দ্য পাওয়ার অফ এ কমন ম্যান” (একজন সাধারণ মানুষের ক্ষমতাকে কখনই অবমূল্যায়ন কোরো না)। বিজেপির “হাফ ফেডারেলিজম” সম্পর্কে সংসদে ভাষণ দিতে গিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বিহারে বিজেপির শরিক জনতা দল (জেডিইউ)র ১২টি আসন রয়েছে, যার মানে বিজেপির ১২ জন সাংসদ রয়েছে। বাংলাতেও বিজেপির ১২ জন সাংসদ রয়েছে। কিন্তু বিহারে বিজেপি সরকারে আছে, বাংলায় নয়। সুতরাং, বিহার পায় ‘বোনাঞ্জা’, আর বাংলার জন্য ”ব্লকেড”। এটিই হলো ‘হাফ ফেডারেলিজম’। বাংলার জন্য কোনও অর্থই বরাদ্দ করা হয়নি। এটি একটি বাংলা-বিরোধী বাজেট।”
সাংসদ আরও বলেন, “কেন্দ্রের বিভিন্ন খাতে রাজ্যের ১.৭ লক্ষ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। রাজ্য সরকার কর্মশ্রী প্রকল্প চালু করেছে, যা জবকার্ডধারীদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে, ৫১ লক্ষ শ্রমিককে তার নিজের তহবিল থেকে মজুরি দেওয়া হয়েছে। রাজ্য সরকার গত বছরের ডিসেম্বর মাসে বাংলার বাড়ি প্রকল্প চালু করেছে, যা ১২ লক্ষ উপভোক্তাকে পূর্ণরূপে রাজ্যের নিজস্ব তহবিল থেকে বাসস্থান প্রদান করছে। কেন আমি আপনাদের এই তথ্যগুলি জানাচ্ছি? কারণ আপনাদের সবাইকে জানানো উচিত যে, যদিও আপনি [কেন্দ্র] বাংলা থেকে বঞ্চিত করেছেন, আমরা এখনও গর্বিতভাবে দাঁড়িয়ে আছি, আত্মনির্ভরতার প্রকৃত উদাহরণ হিসেবে ”চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির।” তিনি শেষে আরও বলেন “কেন্দ্র ন্যায্য অর্থ বন্ধ করে এবং বাংলার জনগণের জীবন নিয়ে রাজনীতি করছে, বাংলার জনগণ কখনও ভিক্ষা করতে প্রস্তুত নয়। আমরা তৈরি করি, আমরা প্রদান করি, আমরা অগ্রসর হই, আমরা বেড়ে উঠি, তারা সমর্থন দিক বা না দিক।