নামখানায় সিবিআই তদন্তের দাবী অগ্নিমিত্রা পলের।

রবীন্দ্রনাথ মন্ডল, কাকদ্বীপ : ২০২২ সালের ১১ই জুলাই নামখানার রাজনগর এলাকায় এক গৃহবধুর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। আর সেই তদন্তের গতি এখনো পর্যন্ত না এগোনোর অভিযোগ তুললেন রাজ্য বিজেপির মহিলা মোর্চার সভাপতি অগ্নিমিত্রা পল। সোমবার নামখানায় মৃতা গৃহবধুর পরিবারের লোকজনের সঙ্গে দেখা করেন অগ্নিমিত্রা পল।
প্রায় নয় মাস আগে নামখানা থানার রাজনগর এলাকায় বাড়ির পাশ থেকে হাঁটুমোড়া অবস্থায় ভবানী দাস নামের এক গৃহবধুর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। সেই সময় মৃতা গৃহবধুর স্বামী কর্মসূত্রে কেরালায় ছিলেন। ঘটনার দিন বাড়িতে ছিলেন তার বড় মেয়ে এবং জামাই ও ছোট মেয়ে। সন্ধার পর ওই গৃহবধূকে বাড়িতে দেখতে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি করে। এরপরেই বাড়ির পাশে একটি নিমগাছে গলায় ফাঁস লাগানো হাঁটু মোড়া অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায়। পুলিশ দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ডায়মন্ড হারবার হাসপাতালের মর্গে পাঠান। পরিবারের পক্ষ থেকে নামখানা থানায় গৃহবধূকে ধর্ষণ করে মেরে ফেলার অভিযোগ করা হয়েছিল। দীর্ঘ নয় মাস কেটে গেলেও অভিযোগ তদন্তের গতি এগোয়নি।
দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হয়ে গেলেও এই ঘটনার কোনো সঠিক তদন্ত হয়নি বলে অভিযোগ। এদিন ওই মৃতার পরিবারের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেন বিজেপি নেত্রী তথা বিধায়িকা অগ্নিমিত্রা পল এবং তাদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন। এরপর তিনি নামখানা থানায় যান, প্রশাসনের কাছে এই ঘটনার সঠিক তদন্তের দাবি করেন।
এ বিষয়ে অগ্নিমিত্রা পল বলেন এই কেসটি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য শাসকদলের মদতে প্রশাসন যথেষ্ট চেষ্টা করেছে। এমনকি ময়নাতদন্তের তথ্যও ভুল দিয়েছে। অগ্নিমিত্র পালের দাবি ২০২২ সালের ১১ই জুলাই এর সেই দেহ এখনো পোড়ানো হয়নি মর্গে রয়েছে। এবং পরিবারকে যে দেহ দেখানো হয়েছিল সেই দেহ তাদের নয়। আমরা মহামান্য আদালতের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রেখেছি, এর শেষ আমরা দেখে ছাড়বো। প্রয়োজনে আমরা সিবিআই এর দাবি করব।
রাজনগরে সুকুমার দাসের স্ত্রীকে গণধর্ষণ ও খুন করার অভিযোগের সঠিক তদন্ত ও দোষীদের শাস্তির দাবি নিয়ে নামখানা থানাতে জান বিজেপি নেত্রী।

পাশাপাশি এদিন দুপুরে কাকদ্বীপ ব্লকের বাপুজী অঞ্চলের মাইতির চক এলাকায় যান। সেখানে দলীয় কর্মী দীপঙ্কর হালদার এক মাস আগে তৃণমূলের হাতে আক্রান্ত হয় বলে অভিযোগ। তার বাড়িতে যান, পরিবারকে সান্তনা দেন এবং দীপঙ্করের পাশে থাকার আশ্বস্ত করেন বিধায়িকা অগ্নিমিত্রা পল।
দীপঙ্কর জানায়, গত ফেব্রুয়ারি মাসে ২১ তারিখে রাত্রে বাড়ি ফেরার সময় কয়েকজন দুষ্কৃতি আচমকাই বিয়ারের বোতল নিয়ে আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। আমাকে মারধর করে, বেশ কয়েকদিন কাকদ্বীপ হাসপাতালে চিকিৎসাধিন ছিলাম। হারউডপয়েন্ট কোস্টাল থানায় আমার এফ আই আর নেয়নি। পুলিশ তাকে জানিয়েছে আগে তদন্ত তারপর অভিযোগ। তবে এখনো পর্যন্ত কোন তদন্ত হয়নি বলে অভিযোগ দীপঙ্করের।
অগ্নিমিত্রা বলেন, এই মমতা সরকার স্বৈরাচারী শাসক, এবং স্বৈরাচারী শাসন চালাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, শাসকদল বিরোধী দল করার জন্য কন্ঠরোধ করার চেষ্টা করছে নানাভাবে। বিজেপি সহ অন্যান্য দলের নেতাকর্মীদের উপরে হামলা করছে এই মমতা সরকার। মথুরাপুর সাংগঠনিক জেলায় বিধানসভা নির্বাচনের পর বিজেপির বহু কার্যকর্তা পালিয়ে বেড়িয়েছে।
অন্যদিকে বিরোধী দল করার জন্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক এর উপর আক্রমণ হয়েছে। কৌস্তব বাগচী কে হেনস্থা করা হয়েছে। বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকীকে কোন তথ্য ছাড়া জোর খাটিয়ে ৪৫ দিন আটক করে রাখা হয়েছিল। সরকারের সমালোচনা করলেই তাকে জেলে যেতে হচ্ছে।
এ রাজ্যে তৃণমূলের জন্য এক নিয়ম অন্যদের জন্য আলাদা নিয়ম। বিজেপি নেত্রী সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেন “এ রাজ্যে কি বিরোধী করা পাপ?”
দীপঙ্করের উপর হামলা হওয়ার এফআইআর না নেওয়ার দাবি নিয়ে অগ্নিমিত্রা পাল ও বিজেপির সাংগঠনিক জেলা সভাপতি প্রদ্যুৎ বৈদ্য সুন্দরবন পুলিশ সুপারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
এদিন অগ্নিমিত্রা পলের নামখানা ও কাকদ্বীপ সফর নিয়ে নামখানা ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস যুব সভাপতি অভিষেক দাস বলেন, এখানে তৃণমূলের কোন যোগ নেই। রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য অগ্নিমিত্রা পল এইসব বলছেন। বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। আইনের চোখে যে দোষী হবে সে নিশ্চই শাস্তি পাবে।