লতা পুরকাইত, মথুরাপুর: স্ত্রী সন্তানকে না পেয়ে আত্মঘাতী হলেন এক যুবক। এই ঘটনায় পরিবার এবং এলাকায় শোকের ছায়া নেমেছে। ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিন ২৪ পরগনার মথুরাপুর থানার কালিকাপুর গ্রামে। জানা গেছে, কালিকাপুর গ্রামের বাসিন্দা পঞ্চুরাম পাইকের ছোট ছেলে সুকদেব পাইকের সাথে বছর দশেক আগে মন্দির বাজার থানার রঘুনাথপুর গ্রামের দীপু হালদারের এক মাত্র মেয়ে সুস্মিতার বিবাহ হয়। সুকদেব ও সুস্মিতা দুজনে ভালোবেসেই বিয়ে করেছিল। তাদের একটি নয় বছরের পুত্র সন্তান আছে।
কর্মসূত্রে মাঝে মধ্যেই বাইরে থাকতো সুকদেব। এলাকায় খুব ভালো ছেলে হিসাবে পরিচিত ছিল সে। জানা যায়, কাজের জন্য সুকদেব বাইরে ছিল। গত পনেরো দিন আগে বাপের বাড়িতে যাবে বলে ছেলেকে নিয়ে সুস্মিতা শশুর বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। এরপর ছেলেকে তার বাপের বাড়িতে রেখে অন্য পুরুষের সাথে অন্যত্র চলে যায়। সব জানতে পেরে সুকদেব বাড়িতে ফিরে শশুর বাড়িতে যায় নিজের ছেলেকে আনার জন্য। কিন্তু শশুরবাড়ি থেকে ছেলেকে না দেওয়ায় নিজের বাড়িতে ফিরে আসে।
স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনার বহু চেষ্টা করে সুকদেব, কিন্তু কোনভাবেই তা সম্ভব হয়নি। একদিন পর সুকদেব তার শ্বশুরকে ফোন করে স্ত্রী সন্তানকে ফিরে পাওয়ার অনুরোধ করে। শশুর তার মেয়ের প্রসঙ্গ এড়িয়ে যায় এবং নাতিকে পাঠানোর ক্ষেত্রে বাহানা করতে থাকে বলে অভিযোগ। অবশেষে বুধবার দুপুরে নিজের ঘরে সে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে। মৃত্যুর আগে স্ত্রী সুস্মিতা এবং শশুর বাড়িকে লিখিত ভাবে দায়ী করে যায়।
এই ঘটনায় প্রতিবেশি এক মহিলা বলেন, সুকদেব ছেলে হিসাবে খুব ভালো ছিল। নিজে দেখে ভালোবেসে বিয়ে করেছিল। কিন্তু স্ত্রী চলে যাওয়া এবং তার ছেলেকে মামা বাড়ির লোকজন আসতে দেয়নি, এইসব মানষিক ভাবে মেনে নিতে পারেনি সুকদেব। নিজের স্ত্রী অন্যথায় চলে যাওয়া এবং সন্তানকে কাছে না পেয়ে একেবারেই ভেঙ্গে পড়ে সে, ফলে মানসিক অবসাদে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।
বৃদ্ধ বাবা পঞ্চুরাম ও মা অনিমা পাইক এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা বাড়ির ছেলের এই পরিনতি মেনে নিতে পারছেন না। পরিবারের লোকজন ও প্রতিবেশীরা সকলেই সুস্মিতা এবং তার বাপের বাড়ির লোকজনদের সুকদেবের অকাল মৃত্যুর জন্য দায়ী করেছেন। তাদের সকলের কঠোরতম শাস্তির দাবী জানিয়ে মৃতের পরিবার লিখিত অভিযোগ করেছেন মথুরাপুর থানায়। প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, কালিকাপুরে বছর ৩৬ এর সুকদেব পাইক আত্মহত্যা করে, পুলিশ তার বাড়ি থেকে দেহ উদ্ধার করে ডায়মন্ডহারবার মর্গে পাঠায় ময়নাতদন্তের জন্য। তার পরিবারের তরফে একটি অভিযোগ দায়ের করেছে। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখব।