Wednesday, June 18, 2025
Ad

নারী নির্যাতন : পুরুষতান্ত্রিক সমাজের কলঙ্ক।

Must read

দেবরাজ সাহা, News দিগন্ত বার্তা: নারী নির্যাতন আজকের সমাজে এক ভয়াবহ সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। ২১ শতকের উন্নত সভ্যতায় পদার্পণ করলেও নারীরা আজও সহিংসতা, নির্যাতন ও ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা নারীর মর্যাদা, স্বাধীনতা ও মানবিক অধিকারকে প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জ করছে। এই নির্যাতন শুধু একটি সামাজিক সমস্যা নয়—এটি এক অসভ্যতা, যা পুরো সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য লজ্জাজনক।এই সমাজে নারীর অবস্থান এখনও দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকের মতো। তাদের মতামত, স্বাধীনতা ও অস্তিত্বকে বারবার অবহেলা করা হয়। এই অবমাননাকর দৃষ্টিভঙ্গির ফলেই জন্ম নেয় ধর্ষণ, যৌন হয়রানি, বাল্যবিবাহ, এসিড নিক্ষেপ, শারীরিক নির্যাতন ও ঘরোয়া সহিংসতা। সবচেয়ে করুণ বাস্তবতা হলো—নির্যাতনের পরও অপরাধীর নয়, বরং নির্যাতিত নারীর কাঁধেই সমাজ লজ্জার ভার চাপিয়ে দেয়। অথচ আমরা Women’s Day পালনে ব্যস্ত, যেটা এক নির্মম পরিহাস বৈ আর কিছুই নয়। সমাজ এখনো নারীর প্রতি শ্রদ্ধা ও সহানুভূতির জায়গায় পৌঁছাতে পারেনি। নারীকে অধীনস্থ ভাবার মানসিকতা এতটাই গভীরে প্রোথিত যে, অনেক ক্ষেত্রেই নির্যাতনকে ‘শৃঙ্খলা’ বা ‘নিয়ন্ত্রণ’ বলেও বৈধতা দেওয়া হয়। সবচেয়ে ভয়ংকর হলো, নির্যাতনের পর নারীকে করা হয় প্রশ্নবাণে বিদ্ধ। তার পোশাক, চালচলন, আচরণ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়, অথচ অপরাধীর দিকেই প্রশ্ন ওঠে না। অনেক সময় সম্মান রক্ষার অজুহাতে নারীকে চুপ থাকতে বলা হয়। এই চুপ করিয়ে দেওয়ার সংস্কৃতিই ন্যায়বিচারের পথে সবচেয়ে বড় বাধা।স্বাধীনতার এত বছর পরেও যদি নারীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে, তবে তা সমাজের অবক্ষয়েরই প্রমাণ। সংবাদপত্রের শিরোনাম, টেলিভিশনের খবরে কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিদিনই উঠে আসে নারীর প্রতি সহিংসতার গল্প। কিন্তু তবুও আমরা নির্যাতিতার পাশে দাঁড়াতে ব্যর্থ—বরং তাকেই সমাজ লজ্জার প্রতীক করে তোলে। প্রশ্ন হলো—এই লজ্জা কাদের? সেই নারীর, যিনি নিপীড়নের শিকার? না, এই লজ্জা সেই সমাজের, যারা তাকে রক্ষা করতে পারেনি; সেই অপরাধীর, যে মানুষত্ব হারিয়ে নারীর ওপর পাশবিকতা চালায়। খুন, ধর্ষণ ও বিচারহীনতা এই তিনটি শব্দ যেন আজকের সমাজের এক নিষ্ঠুর চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। অপরাধ বেড়ে যায় তখনই, যখন অপরাধীর মনে বিচারহীনতার সাহস জন্মায়। মামলা চলে বছরের পর বছর, সাক্ষী হুমকির মুখে পড়ে, তদন্ত ধীরগতির হয়, আর অপরাধী হয়ে ওঠে মুক্ত—এই বাস্তবতা বারবার আমাদের অসহায়তা প্রকাশ করে। অন্যদিকে ভুক্তভোগী থেকে যায় এক অনন্ত যন্ত্রণার বন্দী হয়ে।প্রশ্ন হলো, নারী নির্যাতনের এই ধারাবাহিকতা আর কতদিন চলবে? শুধু আইন থাকলেই হবে না—প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা, প্রশাসনিক জবাবদিহিতা এবং সর্বোপরি একটি ন্যায়ভিত্তিক, মানবিক সমাজব্যবস্থা। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ যদি এটি নিশ্চিত করতে না পারে, তবে লজ্জা সেই সমাজের। মনে রাখতে হবে—লজ্জা কখনোই নির্যাতিত নারীর নয়। লজ্জা সেই অপরাধীর, যিনি পাশবিকতা করে। লজ্জা সেই সমাজের, যারা নির্যাতিতার পাশে না দাঁড়িয়ে তাকে দায়ী করে। এবং লজ্জা সেই রাষ্ট্রযন্ত্রের, যারা বিচার দিতে বিলম্ব করে। নারীকে সম্মান, নিরাপত্তা ও সমান অধিকার দেওয়া আমাদের সকলের নৈতিক দায়িত্ব। নারীর মর্যাদাই একটি সভ্য সমাজের প্রকৃত চিত্র। এখনই সময় দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটিয়ে এই সমাজকে গড়ে তোলার, যেখানে নারীর প্রতি নয়, বরং অপরাধীর প্রতি থাকবে লজ্জা ও ঘৃণা।

- Advertisement -

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -

Latest article