মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ১০০ শতাংশ প্রতিবন্ধী।
নিজস্ব সংবাদদাতা, নামখানা: শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে পেছনে ফেলে সাফল্যের শিখরে পৌঁছতে চায় নামখানার ফ্রেজারগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েতের অমরাবতী গ্রামের বাসিন্দা তমশ্রী মন্ডল। এবছর সে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। মায়ের কোলে চেপেই পরীক্ষা দিতে এসেছে রাজনগর বিশ্বম্ভরপুর হাই স্কুলে। খুব ছোটবেলা থেকেই লড়াই করে পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছে। মেরে কেটে তার উচ্চতা হবে আড়াই ফুট। ১০০ শতাংশ প্রতিবন্ধী। হাঁটাচলা তো দূরের কথা দাঁড়াতেই পারে না সে। বাবা রাজমিস্ত্রির কাজ করেন, মা গৃহবধূ। অভাবের সংসারে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায় তমশ্রী। তার লক্ষ্য, উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া। সেই মতো আজও সে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। পরিবার ও স্কুলের শিক্ষকরাও তার পাশে রয়েছে।ছোট থেকেই উঠে দাঁড়ানোর ক্ষমতা নেই তমশ্রীর। প্রতিনিয়ত চলছে চিকিৎসা। জন্ম থেকেই শরীরের হাড় গুলিতে ক্যালসিয়ামের অভাব। তাই শরীরে হাড়ের গঠন যথাযথ হয়নি। হাঁটাচলাও করতে পারেনা তমশ্রী। বিছানাতে শুয়েই দিনের বেশিরভাগ সময় কাটে তার। বাড়ি থেকে বেরিয়ে কোথাও যাওয়ার জন্য ভরসা বাবা কিংবা মায়ের কোল। এভাবেই বাবা-মায়ের কোলে চেপে প্রাইমারি স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে বর্তমানে নামখানা ব্লকের নারায়নীতলা ধনেশ্বর শিক্ষা সদনের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী তমশ্রী। এই স্কুলের পরীক্ষার্থীদের এবারের সেন্টার পড়েছে বেশ কয়েক কিলোমিটার দূরে, রাজনগর বিশ্বম্ভর হাই স্কুলে। বাবা মায়ের সঙ্গে মোটর বাইকে চেপে সেন্টারের সামনে এসে মায়ের কোলে চেপে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করে তমশ্রী। আসলে অদম্য জেদের কাছে সবকিছুই হার মেনেছে। ক্ষীণ শরীরেও চলছে পুঁথিগত শিক্ষার পাঠ চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার লড়াই।

সমস্ত প্রতিবন্ধকতাকে পেছনে ফেলে মায়ের কোলে চেপে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করতে করতে তমশ্রী বলেন “আমি অনেক লেখাপড়া করতে চাই। এটা জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা। প্রিপারেশন ভালোভাবেই নিয়েছি, তবে একটু ভয় রয়েছে। সে জানায়, স্কুলের বন্ধু বান্ধবি এবং শিক্ষক-শিক্ষিকারা আমাকে খুব সহযোগিতা করে। কখনো কখনো স্কুলে যেতে না পারলেও স্কুলে কি পড়া দেওয়া হয়েছে, কিংবা শিক্ষকরা কোন নোটস দিয়েছেন কিনা সেইসব বিষয় আমাকে জানিয়ে দেয় আমার সহপাঠী এবং শিক্ষকেরা।”