বঙ্গীয় ত্রিবেণী কুম্ভ স্নান মহোৎসবে শিব সহস্র নাম মহাযজ্ঞ।
বন্দনা ভট্টাচার্য্য, হুগলী: ১৪৪ বছর পর প্রয়াগ রাজের মহাকুম্ভ স্নানের পর কয়েকশো বছর পরে বিরল যোগে কুম্ভ স্নানের অভূতপূর্ব কর্ম যজ্ঞের আয়োজন, এবার হুগলীর ত্রিবেণীতে। ১১ ই ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে কুম্ভস্নান মহোৎসব। মঙ্গলবার শঙ্খ ধ্বনী ও বংশী ধ্বনীর মাধ্যমে মহা কুম্ভের সূচনা হয় আনুষ্ঠানিক ভাবে। বাংলার ইতিহাসে ৭০০ বছরের সংস্কৃতিকে মান্যতা দিয়ে চতুর্থ বছরের জন্য ত্রীবেণীতে আয়োজন করা হয়েছে বঙ্গীয় কুম্ভস্নানের। ১১, ১২এবং ১৩ ই ফেব্রুয়ারি মাঘী পুর্নিমার পূণ্য তিথীতে চলছে শাহী স্নান। এখানে গঙ্গা, যমুনা, সরস্বতী এই তিন নদীর সঙ্গম স্থল রয়েছে। ১১ তারিখ সকালে আদিত্য মহা মন্ত্র যপের মধ্য দিয়ে ত্রিবেনী বাসীর নিদ্রা ভঙ্গ হয়। এরপর রুদ্রাক্ষী মহাযজ্ঞ ও শিব শহশ্র নাম মহাযজ্ঞ সম্পন্ন হয়। গুণী জনেরা একত্রে দ্বীপ প্রজ্জ্বোলন করে এদিন বিকালে বঙ্গীয় কুম্ভ স্নানের সূচনা করেন। এদিন মেলা প্রাঙ্গনে তিনশত শিল্পীর উপস্থিততে মৃদঙ্গ, শ্রখোল, গৌরীয় নৃত্য, উপস্থাপনা করা হয়। সন্ধ্যায় ত্রিবেণী ঘাট ও সপ্তর্ষী ঘাটে সাধু সন্তদের উপস্থিততে গঙ্গা অভিষেক ও ১০ হাজার প্রদীপ গঙ্গারতি সম্পন্ন হয়।

বুধবার সকাল থেকে চলে শাহী স্নান। প্রথমে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা নাগা সন্যাসীরা স্নান পর্ব সারেন। তারপর লক্ষাধিক পূন্যার্থী পূন্যস্নান করেন। ইতিহাস মতে, ৭০০ বছরেরও বেশী সময় আগে হুগলীর ত্রিবেনীতে কুম্ভ স্নানের প্রচলন ছিল। সেই সময় দুর দুরান্ত থেকে সাধু সন্তরা ত্রিবেণীতে ভীর জমাতেন। কিন্তু আফগানদের দকলদারির কারণে ধীরে ধীরে কম্ভ স্নান বন্ধ হয়ে যায়। সেই কারণে সাধুদের আনাগোনাও বন্ধ হয়ে যায়। সেই সংস্কৃতি গত তিন বছর ধরে আবার ফিরিয়ে আনা হয়েছে।বঙ্গীয় কুম্ভমেলার পরিচালনা কমিটির মুখ্য পরিচালক কাঞ্চন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, মাঘ মাসের সংক্রান্তিতে জ্যোতিষ মতে মকর রাশি থেকে সূর্য কুম্ভ রাশিতে প্রবেশ করে। সেই দিনেই শাহী স্নান হয়। গঙ্গা সাগর মেলার এক মাস পর ত্রিবেণীতে কুম্ভ মেলা হয়। ইতিহাস অনুযায়ী, ১২৯৮ সালে ত্রিবেণীতে শেষ কুম্ভমেলা হয়েছিল। তারপর ২০২২ সালে আবার নতুন করে এই কুম্ভস্নানের আয়োজন করা হয়। এই সিদ্ধান্তে খুশি পূন্যার্থী এ ভক্তবৃন্দ। কুম্ভমেলাকে কেন্দ্র করে প্রশাসন খুব তৎপর। সাধু সন্ত সহ আগত ভক্ত ও পূণ্যার্থীদের সুবিদার্থে ত্রিবেনী কুম্ভ পরিচালন সমিতি, বাঁশবেড়িয়া পৌরসভা,সপ্তগ্রাম বিধানসভা সহ পুলিশ প্রশাসন সর্বদা সতর্কতার সাথে কাজ করছে। রয়েছে প্রাথমিক চিকিৎসা ব্যবস্থাও। যদিও স্থানীয় বাসিন্দা আশিতিপর এক বৃদ্ধা বাঁশবেড়িয়া পৌরসভার পৌর প্রধান আদিত্য নিয়োগী সম্মন্ধে এক রাশ ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেন, প্রায় সারা বছর ত্রিবেণী সঙ্গমে ভক্তের আনাগোনা লেগেই থাকে। এত দীর্ঘ এলাকায় তাদের একটু আচ্ছাদন বা বসার জায়গা নেই। পৌরসভার সেই দিক ভ্রুক্ষেপ নেই। মেলাকে কেন্দ্র করে রাজনীতির আঙ্গিনায় তিন দিনের প্রশাসনিক তৎপরতা দেখা গেলেও, সারা বছর দুরদুরান্ত থেকে আসা ভক্তরা একটু বসার সুবিধা পায়না। তীর্থস্থান বানাতে হলে ভক্তদের কথাও ভাবতে হবে।