বন্দনা ভট্টাচার্য্য, হুগলী: প্রয়াত হলেন শিল্পী ও সুরকার ড.অনুপ ঘোষাল। সঙ্গীত জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র ঝরে গেলো। বাংলা হারালো এক অসামান্য এবং জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী তথা সুরকারকে। তিনি শুক্রবার সকালে কোলকাতায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল আটাত্তর বছর। শাস্ত্রীয় সঙ্গীত, ঠুমরী, খেয়াল, ভজন, রাগপ্রধান, রবীন্দ্র সঙ্গীত, নজরুল গীতি,আধুনিক গান সহ অগনিত গান গেয়েছেন তিনি। তিনি একজন গানের জগতের সম্রাট ছিলেন, বলা যেতেই পারে।
চলচিত্রে প্লে ব্যাক শিল্পী হিসেবে তিনি জনপ্রিয়তার শির্ষে ছিলেন। প্লে ব্যাক শিল্পী হিসাবে চলচিত্র জগতে তাঁর প্রবেশ সত্যজিৎ রায়ের হাত ধরে। গুপি গাইন বাঘা বাইন সিনেমায় তিনি প্রথম প্লে ব্যাক শিল্পী হিসাবে গান করেন। এরপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। এক সঙ্গীত পরিবারেই জন্ম হয়েছিল অনুপ ঘোষালের। বাবা অমূল্য চন্দ্র ঘোষাল, মা লাবণ্য ঘোষাল। বাবা পিয়ানো বাজাতেন। মা লাবণ্য ঘোষাল এবং দিদি গীতা ঘোষালও খুব ভালো গান গাইতেন। মা এবং দিদির কাছেই তার গানের হাতে খড়ি। ভালো গান গাওয়ার জন্য অল ইন্ডিয়া রেডিও তে শিশু মহল নামক অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন খুব ছোট বয়সে।
গানের পাশাপাশি আশোতোষ কলেজ থেকে স্নাতক করেন। এরপর পি এইচ ডি করেন রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ১৯৬৮ সালে গুপি গাইন বাঘা বাইন চিলচিত্রে গান গেয়ে মাত্র ঊনিশ বছর বয়সেই তিনি জনপ্রিয়তার শির্ষে পৌছান। এরপর সত্যজিৎ রায়ের হিরক রাজার দেশে, গুপি বাঘা ফিরে এলো, কবি, নিমন্ত্রন, বিরাজ বৌ, নায়িকার ভূমিকায়, সাগিনা মাহাতো, হিন্দি চলচিত্র মাসুম এর মত অসংখ্য চলচ্চিত্রে প্লে ব্যাক শিল্পী ছিলেন। সাগিনা মাহাতো চলচিত্রে তিনি সঙ্গীত পরিচালক হিসাবে কাজ করেছেন। ১৯৮১ সালে ‘হিরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্রে গান গেয়ে তিনি জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন। ২০১১ সালে হুগলীর উত্তরপাড়া বিধানসভা থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে বিধায়ক নির্বাচিত হন। সেই বছরই অর্থাৎ ২০১১ সালে রাজ্য সরকার তাকে নজরুল স্মৃতি পুরস্কার, ২০১৩ সালে সঙ্গীত মহা সম্মান প্রদান করে। ড. অনুপ ঘোষালের প্রয়ানে সঙ্গীত জগতের অপূরণীয় ক্ষতি হল।