টাইমস বিজনেস অ্যাওয়ার্ডস ২০২৫ সম্মানিত জে.সি মেমোরিয়াল।
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: দক্ষিণ ২৪ পরগনার প্রত্যন্ত গঙ্গাসাগরে শূন্য থেকেই শুরু হয়েছিল। ধীরে ধীরে এখন পূর্ণতার পথে। পশ্চিমবঙ্গের মূল ভূখণ্ড থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগরদ্বীপ। নদীপথ মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে একমাত্র যোগাযোগ মাধ্যম। ঝড়, জল, বৃষ্টিতে সম্পূর্ণ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এই দ্বীপ। প্রকৃতির খামখেয়ালিপনায় বহুবার ছিন্নভিন্ন হয়েছে, নদী-সমুদ্রের নোনা জলে ভেসে গেছে চারদিক। তারপরও মানুষ নতুন করে স্বপ্ন দেখেছে, নতুন ভাবনার সঙ্গে একাত্ম হয়েছে। যদিও সুন্দরবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দ্বীপ এটি। কলকাতা থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই সাগরদ্বীপ।

এমনই প্রতিকূল পরিবেশে CBSE বোর্ড অনুমোদিত ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয় কেবল স্বপ্ন নয়, অনেকের কাছেই দুঃস্বপ্নও। কিন্তু মানুষের জেদ, পরিশ্রম, হেরে না যাওয়ার তুখোড় মনোবল কী না করতে পারে। অসম্ভবও সম্ভব হয়ে ওঠে মানুষের লড়ে যাওয়া মানসিকতায়। সাগরদ্বীপের মতো ক্ষুদ্র পরিসরে তেমনই স্বপ্ন দেখেছেন অতনু মণ্ডল। কেবল স্বপ্ন নয়, প্রতি মুহূর্তের চিন্তা, নতুন কিছু করার উদ্যোমী মনোভাব, সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা এমন কাজ করার সাহস ও শক্তি জুগিয়েছে বাবা পূর্ণেন্দু মন্ডল ও ভাই শান্তনু মন্ডল।

সাগরদ্বীপের বুকে ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়, তাও আবার CBSE বোর্ড? অনেকের কাছেই বিশ্বাসযোগ্য হয়নি। অনেকের বৈরিতা হয়তো আরও প্রত্যয়ী করে তুলেছে। প্রথমে কেন্দ্রীয় বোর্ডের অনুমোদন, তারপর ‘টাইমস বিজনেস অ্যাওয়ার্ডস ২০২৫’। সম্প্রতি কলকাতার জে.ডব্লিউ ম্যারিয়ট অডিটোরিয়ামে ‘পাওনিয়ার স্কুল ইন হলিস্টিক এডুকেশন’ সম্মানে ভূষিত সাগর দিবে গড়ে ওঠা ‘জে.সি. মেমোরিয়াল ইন্টারন্যাশানাল স্কুল’। এদিনের এই অনুষ্ঠানে বিশিষ্টজনদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিখ্যাত অভিনেত্রী জুহি চাওলা, ব্রিটিশ হাই কমিশনের ডেপুটি কনসাল জেনারেল এবং থাইল্যান্ড দূতাবাসের কনসাল জেনারেল সহ বহু গুণী ব্যক্তি।

বিদ্যালয়ের ডিরেক্টর অতনু মণ্ডল বলেন, “সাগরদ্বীপে ইংরেজি মাধ্যম এবং CBSE বোর্ড ছিল দুঃস্বপ্ন। কিছু মানুষের সামর্থ্য থাকলেও কোনও সুযোগ ছিল না। সমাজে প্রতিষ্ঠিত কিছু মানুষকে নিজের বাসভূমি ছেড়ে সন্তানদের আরও ভালো শিক্ষার জন্য শহরাঞ্চলের দিকে পাড়ি জমাতে হতো। এই অসুবিধার কথা অনুভব করেই সাগরদ্বীপের বুকে এমন স্কুলের পরিকল্পনা করা। বহু বাধা অতিক্রম করে এমন সফলতা নতুন কাজের ইচ্ছাশক্তি বাড়ায়। সাগরদ্বীপের মানুষের কাছে, সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই এই উদ্যোগ বলে জানান তিনি।
যেখানে প্রতি মুহূর্তে ঝড়-জলের সঙ্গে মানুষের সখ্য, যেখানে রুজিরুটির জন্য মানুষকে প্রতি মুহূর্তে লড়তে হচ্ছে প্রকৃতির সঙ্গে। তেমনই জায়গায় CBSE বোর্ড অনুমোদিত ইংরেজি মাধ্যম ‘জে.সি. মেমোরিয়াল ইন্টারন্যাশানাল স্কুল’ এবং তার সম্মান প্রাপ্তি গর্বের ও অহংকারের। তিনি বলেন, এই সম্মান পেয়ে মনে হলো আমরা সফল হতে পেরেছি। অতনু মন্ডল আরো বলেন, এই সম্মানিত হওয়ার পিছনে আমার বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা, ছাত্র-ছাত্রী ও তাদের অভিভাবক অভিভাবিকা সহ সমস্ত কর্মচারীদের অবদান আছে।
এত বড়ো মঞ্চে এই পুরস্কার, এই সম্মান গর্বের, প্রশংসার। এই সম্মান বহু পরাজিত মানুষের কাছে অনুপ্রেরণা হোক। গর্বিত অনুভব করেছেন বিদ্যালয়ের পড়ুয়া এবং অভিভাবকরা, গর্বিত সাগরদ্বীপের মানুষজনও।