বিধায়ক এবং মন্ত্রীর কোন্দল প্রকাশ্যে।
বন্দনা ভট্টাচার্য, হুগলি: হুগলি জেলায় চুঁচুড়ায় বেশ কয়েকদিন ধরে একাধিকবার শাসক দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে। এবারে চুঁচুড়ার বিধায়কের মন্তব্য ঘিরে সেই দ্বন্দ্ব বেশ কিছুটা বিতর্ক বাড়িয়ে দিল। মঙ্গলবার হুগলির দেবানন্দপুরে কর্মীসভা ছিল। সেই কর্মী সভায় উপস্থিত ছিলেন চুঁচুড়ার বিধায়ক অসিত মজুমদার। তিনি ও কর্মীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, “সিঙ্গুরের আন্দোলন নিয়ে আমাকে কিছু বলবেন না। মন্ত্রী বেচারাম মান্না, মন্ত্রী স্নেহাশীষ চক্রবর্তী, মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন, এদের রাজনীতিতে জন্ম আমার হাত ধরেই বেচারাম সিপিএম করতো। ট্রেড ইউনিয়ন করতো হাফ প্যান্ট পরে, এদের রাজনীতিতে আমিই নিয়ে এসেছি”।
আর বক্তব্যের ভিডিও ভাইরাল হতেই সরব হয়েছেন সিঙ্গুরের বিধায়ক তথা কৃষি বিপণন মন্ত্রী বেচারাম মান্না।বুধ বার মন্ত্রী তাঁর ফেসবুক ওয়ালে অসিত মজুমদারের বক্তব্যের সেই ভিডিও শেয়ার করে নিজের বক্তব্য পোস্ট করেন। তিনি ফেসবুকে লেখেন, “চরিত্রহীন লম্পট তোলাবাজ ও পরহিংসাকারী কিছু ব্যক্তি আমার সম্বন্ধে না জেনে সমাজ মাধ্যমে ওলট পালট মন্তব্য করছেন। যিনি কিনা ২০০০ সাল থেকে তৃণমূল কংগ্রেস দলে যোগ দিয়েছেন। আর আমি ১৯৯৫ সাল থেকে নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে রয়েছি, এবং ১৯৯৮ সালে তৃণমূল কংগ্রেসের গঠনের শুরু থেকেই নেত্রীর পাশে আছি। ১৯৯৮ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হিসেবে। পঞ্চায়েতে নির্বাচিত হয়ে পঞ্চায়েত সদস্য হিসেবে কাজ শুরু করেছি। ২০০০ সালে হুগলি জেলা পরিষদের উপনির্বাচনে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছি। ২০০৩ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনে হুগলি জেলা পরিষদের সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হিসেবেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছি। ২০০৩ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত সিঙ্গুর ব্লক তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভাপতি দায়িত্ব পালন করেছি। ২০০৭ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সিঙ্গুর ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের দায়িত্ব পালন করেছি। ২০০৯ সালে নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই একটি জনসভা থেকে ঘোষণা করে হুগলি লোকসভা কেন্দ্রের সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী ডাক্তার রত্না দে নাগের ইলেকশন এজেন্ট হিসেবে নিযুক্ত করেছিলেন। মাননীয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে সিঙ্গুর আন্দোলনের ইতিহাস তো সর্বজনবিদিত। তাই এইসব অকৃতিস্থিত ব্যক্তি সমাজের মাধ্যমে মন্তব্য করে দলেরই ক্ষতি। হাফ প্যান্ট পরে শ্রমিক হয়ে ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন করাটা কোন অপরাধ নয়, হাফ প্যান্ট পরা লোকেদেরই ভোটের সময় এইসব মানুষেরা ভোটের জন্য পায়ে ধরে। সিঙ্গুর আন্দোলন করতে গিয়ে বেচারাম মান্না মার খেয়েছে। জেল খেটেছে আর এরা আন্দোলনের নামে জেলায় চাঁদা তুলেছে। ২০০৬ সালে ২৫ সেপ্টেম্বর সিঙ্গুর বিডিও অফিসের ভিতরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সহকর্মী সমর্থকদের সিপিএমের পুলিশ বাহিনী মারধর করছিল। তখন এই নেতারাই পুলিশের কথা শুনে আগেভাগে সিঙ্গুরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কে রেখে পালিয়ে গিয়েছিল”।
বিজেপির সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক সুরেশ সাউ এই বিষয়ে কটাক্ষ করে বলেন, শাসক দলের গোষ্ঠী কোন্দল এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, বিধায়ক মশাই মন্ত্রীদেরও ছাড়ছেন না। বিধানসভা ভোট যত বেশি এগিয়ে আসবে তত এদের গোষ্ঠী কোন্দল প্রকাশ পাবে। আর শুধু হুগলি জেলা নয় , সারা পশ্চিমবঙ্গের মানুষ এই বিষয়টা উপভোগ করবে। বিধায়ক মন্ত্রীর গায়ে কাঁদা ছুড়ছে মন্ত্রী বিধায়কের গায়ে কাঁদা ছুড়ছে। এটাই হচ্ছে তৃণমূলের বর্তমান অবস্থা। অবশ্য পরে এই বিষয়ে অসিত মজুমদার বলেন, “আমার মন্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা হচ্ছে,। সম্পূর্ণ ভিডিওটা প্রকাশ করলে দুধ আর জল আলাদা হয়ে যাবে। বেচাকে আমি স্নেহ করি। ও আমার থেকে অনেক ছোট আমার ধারণা ও যা বলেছে, না বুঝেই বলেছে। দলের নেতৃত্বকে চাঙ্গা করতে বেচা, স্নেহাশীষ, ইন্দ্রনীলের উদাহরণ দেওয়া হয়েছে”। তবে এই ঘটনায় একটু হলেও অস্বস্তিতে তৃণমূল।