“দীর্ঘ বছরের জমা জজ্ঞাল থেকে তৈরী হচ্ছে মিথেন গ্যাস। তার থেকে আগুন ধরে বিষাক্ত ধোঁয়ায় দুষিত হচ্ছে পরিবেশ। এই সমস্যায় সব থেকে বেশী সাফার করছে থানা” : পুলিশ আধিকারিক সঞ্জয় সরকার।
বন্দনা ভট্টাচার্য্য, হুগলী: অত্যন্ত জনবহুল এলাকায় আবর্জনার স্তূপ। বিভিন্ন জায়গা থেকে আবর্জনা নিয়ে এসে জনবহুল এলাকার একটি স্থানে ব্যস্ততম রাস্তার পাশে জমা করা হয়। স্তুপাকৃত জমা আবর্জনার দুর্গন্ধে এলাকার বাসিন্দা সহ পথচারীদের নাভীশ্বাস ওঠে। তার উপরে আবর্জনার স্তূপে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। ফলে বিষাক্ত ধোঁয়ায় ভরে যায় এলাকা। ধোঁয়ার ফলে চোখ দিয়ে জল পড়ে। একেতো দুর্গন্ধ তার উপরে দোসর বিষাক্ত ধোঁয়ায় এলাকার মানুষ তো বটেই, পথ চলতি মানুষও প্রায়শই অসুস্থ হয়ে পড়ে। এই ঘটনা হুগলীর রিষড়া পৌরসভার অন্তর্গত ১০ নম্বর ওয়ার্ডের। রিষড়া থানার ঠিক পিছন দিকেই এই আবর্জনার স্তূপ। এলাকায় চারটি উচ্চ বিদ্যালয়ও রয়েছে। এই রাস্তা দিয়েই প্রতিদিন বিদ্যালয়ের কয়েক হাজার ছাত্রছাত্রী যাতায়াত করে। রাজনৈতিক নেতৃত্ব থেকে সাধারণ মানুষ এমনকি পথচারীরা একাধিক বার এই বিষয়ে প্রশাসনের বিভিন্ন মহলের দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন। কিন্তু কোনো ফল হয়নি। তাই রবিবার ভারতীয় জনতা পার্টির পক্ষ থেকে বিক্ষোভ দেখানো হয়। রিষড়া থানার ঠিক উল্টো দিকে মঞ্চ করে বিজেপির একাধিক নেতা নেতৃ অনশন করে প্রতিবাদ জানান। ১০ নং ওয়ার্ডের পৌর সদস্য তথা শ্রীরামপুর সাংগঠনিক জেলার বিজেপির ভাইস প্রেসিডেন্ট মনোজ সিং এর নেতৃত্বে এদিন সকাল থেকে অনশনের মাধ্যমে বিক্ষোভ প্রদর্শন চলে। আট ঘন্টার অনশন, বিক্ষোভ কর্মসূচিতে দলীয় কর্মী সমর্থকদের সাথে উপস্থিত ছিলেন, রিষড়া ১১ নং ওয়ার্ডের পৌর সদস্যা তথা বিজেপির শ্রীরামপুর সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদিকা শশী সিং ঝা। উপস্থিত ছিলেন এলাকার বহু সাধারণ মানুষও।এই বিষয়ে শশী সিং ঝা জানালেন, এলাকায় শ্রীরামকৃষ্ণ আশ্রম, রিষড়া বিদ্যাপিঠ, অঞ্জুমান, ও সেন্ট থমাস এই চারটি স্কুল রয়েছে। প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই হাজার ছাত্রছাত্রী এই পথে যাতায়াত করে। আবর্জনার দুর্গন্ধ সাথে বিষাক্ত ধোঁয়া তাদের শরীরে প্রবেশ করছে। ফলে তাদের ফুসফুসের ক্ষতি হচ্ছে। অনবরত বিষাক্ত ধোঁয়ায় পরিবেশ দুষিত হচ্ছে। অসুস্থ হচ্ছে স্থানীয়রাও। রিষড়া পৌরসভা, থানা, জেলাশাসক, মহকুমা শাসক সহ একাধিক প্রশাসনিক স্তরে জানিয়েও কোন ফল হয়নি। তাই অনশন করে বিক্ষোভ দেখানো হচ্ছে। মনোজ সিং জানান, দুর্গন্ধ এবং ধোঁয়া থেকে পরিবেশের সাথে সাথে মানুষের স্বাস্থ্যেরও ক্ষতি হচ্ছে। ফলে ফুসফুস, ত্বকের নানান সমস্যা দেখা দিচ্ছে। শরীরে বাসা বাঁধছে ক্যান্সারের মত মারণ রোগ। তাই সাধারণ মানুষের স্বার্থে প্রশাসনের কাছে তাদের দাবি অবিলম্বে পরিবেশকে দূষন মুক্ত করা হোক। অন্যথায় বৃহত্তর আন্দোলন, আমরণ অনশন করবেন বলেও জানিয়েছেন মনোজ সিং।
এই বিষয়ে রিষড়ার পৌরপ্রধান বিজয় সাগর মিশ্র বলেন, এটা পৌরসভার দায়ীত্বের মধ্যে পড়েনা। এই বিষয়ে যা বলার থানা এবং মহকুমা শাসক বলবেন। মহকুমা শাসককে লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে বলেও জানান বিজয় সাগর মিশ্র। রিষড়া থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক সঞ্জয় সরকারকে এই প্রশঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, এই বিষয়ে থানার কিছু করার নেই। এই সমস্যা দীর্ঘ বছরের। প্রায় ৬০ বিঘা পরিত্যক্ত জমিতে অনেক বছর ধরে পৌরসভা থেকেই আবর্জনা ফেলা হত। এবং দীর্ঘ পঞ্চাশ – একশ বছর ধরে এখানে আবর্জনা জমা হয়েছে। কয়েকশ ফুট নীচ পযর্ন্ত এই আবর্জনা থেকে তৈরী হচ্ছে মিথেন গ্যাস। এবং ধিক ধিক করে আগুন জ্বলছে। তার থেকেই ধোঁয়া। সন্ধের পর আগুন বড় আকার নিচ্ছে। ফলে ধোঁয়ার মাত্রাও বেড়ে চারপাশে ছড়িয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে প্রতিনিয়ত জ্বলা আগুনের উৎস্থল এতটাই গভীরে যে, দমকল বিভাগের পক্ষেও এই আগুন নেভাতে বেশ বেগ পেতে হবে। পৌরসভা সহ প্রসাশনের উচ্চ স্তরে বিষয়টি লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে। থানার ঠিক পিছনেই এই আবর্জনার স্তূপ, এবং তার থেকে নির্গত বিষাক্ত ধোঁয়ায় থানাই সব থেকে বেশী সাফার করছে বলেও জানিয়েছেন অফিসার সঞ্জয় সরকার।