Thursday, June 19, 2025
Ad

পুলিশের মারে যুবকের মৃত্যুর অভিযোগ সুন্দরবন পুলিশ জেলায়।

Must read

পুলিশের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ ঢোলাহাট থানায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঢোলাহাট: পুলিশের মারে ২২ বছরের আবু সিদ্দিক হালদারের মৃত্যুর অভিযোগ উঠল ঢোলাহাট থানার বিরুদ্ধে। মৃত যুবকের বাড়ি ঢোলাহাটের ঘাটবকুলতলা গ্রামে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তাল হয়ে উঠলো এলাকা। মৃত যুবকের পরিবারের সদস্যরা মঙ্গলবার সকাল থেকে ধিরে ধিরে জমায়েত করতে শুরু করে থানা চত্বরে। বেলা বাড়তে শুরু হয় মৃতের পরিবার পরিজনের সাথে পুলিশের বচসা। তারপরে পুলিশের সাথে ধস্তাধস্তি। এমনকি ব্যারিকেড ভেঙে ফেলার চেষ্টা করে মৃত যুবকের পরিবার পরিজনরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে আসে পাশের থানা থেকে আরও পুলিশ বাহিনী। পুলিশের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয় ঢোলাহাট থানা চত্বরে। উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি, পুলিশকে লক্ষ করে ইঁট ছোঁড়া হয়। পাল্টা পুলিশের পক্ষ থেকে উত্তেজিত জনতা কে ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ করা হয়। মঙ্গলবার দিনভর থানা চত্বরে দফায় দফায় উত্তেজনা ছড়ায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে আসেন মন্দিরবাজার ডিএসপি সুবীর বাগ, কুলপি থানার ওসি অজয় চন্দ্র।

নিহতের মা তসলিমা হালদার বলেন, গত ইংরাজি ০২/০৭/২০২৪ তারিখে আনুমানিক রাত ১০টা নাগাদ আমার ছেলে আবু সিদ্দিক কে তুলে নিয়ে যায় ঢোলাহাট থানার পুলিশ। সারা রাত আমার ছেলেকে বসিয়ে রাখে। এবং তারপর ০৩/০৭/২০২৪ তারিখে সকালে আনুমানিক ১১.৩০ থেকে ঢোলাহাট থানার পুলিশ বাবুরা লাগাতার সন্ধে ৬.৩০ অবধি লাঠি চার্জ করে। এবং আমার ছেলেকে চুরির সবকিছু কথা স্বীকার করানোর জন্য লাঠি চার্জ প্রয়োগ করে। বেধড়ক মারের কারণেই আমার ছেলে কোনো কিছু না করেই সবকিছু স্বীকার করে নেয়। পরের দিন ০৪/০৭/২০২৪ তারিখে আবু সিদ্দিক হালদার কে কাকদ্বীপ কোর্ট থেকে জামিন করানো হয়। জামিনের পর আবুসিদ্দিক আমাকে ও আমার পরিবারের লোকেদের জানায় কিভাবে পুলিশ অফিসাররা তার ওপরে নির্মমভাবে নির্যাতন করেছিল। লাঠি চার্জ করে ৫টা লাঠি ভেঙে দেয়, কানে ও মাথার পিছনে জোরে চড় থাপ্পড় মারে, বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হয়, তার বুকের ওপরে ও মাথায় লাথি মারে। কাকদ্বীপ কোর্ট থেকে জামিন করিয়ে আনার পরে থেকে আমার ছেলে অনর্গল বমি করতে থাকে। সেইদিন রাতেই আমার ছেলেকে মথুরাপুর হাসপাতালে দেখানো হয় এবং পরেরদিন ০৫/০৭/২০২৪ তারিখে আমার ছেলে কে ডায়মন্ড হারবার এ একটি নার্সিং হোম এ ভর্তি করানো হয়। এবং পরে অবস্থার অবনতি হওয়ায় সেখানে থেকে পার্কসার্কাসের স্বস্তিক সেবা সদন নার্সিং হোমে ভর্তি করা হয়। এবং সেখানেই সোমবার রাত্রি সাড়ে নটা নাগাদ আমার ছেলে পরলোক গমন করে। এই ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশদের ফাঁসির দাবী জানিয়েছে নিহতের মা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার সূত্রপাত গত ৩০ জুন। ওইদিন মৃত যুবকের কাকা মহসিন হালদারের বাড়ি থেকে সোনার গহনা চুরি হয়। আবু সিদ্দিকির পরিবারের অভিযোগ, এই চুরির ঘটনায় তাকে থানায় তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর আবু সিদ্দিককে থানার মধ্যে দফায় দফায় মারধর করা হয়। ৪ জুলাই তাঁকে কাকদ্বীপ মহকুমা আদালতে পেশ করা হয়। ওইদিন জামিন দেয় আদালত। গুরুতর অসুস্থ আবু সিদ্দিককে মথুরাপুর, ডায়মন্ড হারবার ও চিত্তরঞ্জন হাসপাতলে ভর্তির চেষ্টা হয়। কিন্তু অবস্থার অবনতি হওয়ায় সোমবার পার্কসার্কাসের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করা হলে ওই দিনই রাত ৯: ৩০টা নাগাদ যুবকের মৃত্যু হয়।

https://youtu.be/_AZPxg0V4DU?si=nuyknGlbiwlkp-8N

সুন্দরবন পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাও জানিয়েছেন, আদালতে পেশ করার সময় মেডিক্যালে কোন সমস্যা ছিল না। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলে বোঝা যাবে কি হয়েছিল। সেই রিপোর্ট দেখে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

পাশাপাশি বিক্ষোভকারীদের একটি প্রতিনিধি দল ঢোলাহাট থানায় পুলিশ আধিকারিকদের সাথে বৈঠক করে। দীর্ঘ সময় বৈঠক শেষে নিয়তের এক আত্মীয় জানান, ময়না তদন্তে রিপোর্ট আসার পর, তা দেখে ডিএসপি মন্দির বাজার যথাযোগ্য ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। প্রশাসনের প্রতি দৃঢ় ভরসা রেখে আমরা বিক্ষোভ তুলে নিলাম। তবে সুবিচার না পেলে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনে নামবো।

- Advertisement -

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -

Latest article