নিজস্ব প্রতিনিধি, কাকদ্বীপ: এবারের গঙ্গাসাগর মেলার প্রস্তুতিতে বড় বাধা, মুড়িগঙ্গা নদীতে জেগে ওঠা নতুন চর। বৃহস্পতিবার বিকেলে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা শাসক সুমিত গুপ্তা ও সুন্দরবন মন্ত্রী বঙ্কিম হাজরা, কাকদ্বীপের বিধায়ক মন্টুরাম পাখিরার উপস্থিতিতে জরুরী বৈঠক হয়ে গেল জেলা প্রশাসনের আধিকারিক ও ইঞ্জিনিয়ারদের। শুক্রবার থেকে বেশি করে কাজে লাগানো হয়েছে পলি কাটার যন্ত্র। মুড়িগঙ্গার বুকে নতুন চর তৈরীর খবর পেয়েই এদিন বিকেল নাগাদ মুড়িগঙ্গা নদীতে ড্রেজিংয়ের কাজ খতিয়ে দেখতে এলেন সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক। সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী বঙ্কিম হাজরা, বিধায়ক মন্টু রাম পাখিরা, জেলাশাসক সুমিত গুপ্তা সহ জেলা প্রশাসনের আধিকারিক, ইঞ্জিনিয়ার ও শেষ দপ্তরের আধিকারিক এবং ইঞ্জিনিয়ারদের উপস্থিতিতে রাতেই মাপা হল মুড়িগঙ্গা নদীর জলস্তর।
জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে শুরু হবে সাগরমেলা। কিন্তু তার আগেই মেলার প্রস্তুতি চলছে জোর কদমে। এরমধ্যে মুড়িগঙ্গা নদীতে নতুন করে চর তৈরি হওয়ায় বড়সড় বাধার মুখে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন। কাকদ্বীপের লট নম্বর আট থেকে কচুবেড়িয়াতে পারাপারের ক্ষেত্রে মুড়িগঙ্গা নদীতে নতুন চর তৈরী হওয়ায় ভেসেল চলাচল প্রতিদিন ব্যহত হচ্ছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে শেষ হওয়ার কথা ছিল মুড়িগঙ্গা নদীর পলি কাটার (ড্রেজিং) কাজ। কিন্তু নদীর মাঝামাঝি অংশে নতুন করে পলি জমে চড়া পড়ে যাওয়ার জেরে তড়িঘড়ি বৈঠকে বসল জেলা প্রশাসন। বৃহস্পতিবার কাকদ্বীপ মহকুমা প্রশাসনিক ভবনে জেলাশাসক সুমিত গুপ্তার পৌরহিত্যে বসল জরুরী বৈঠক। উপস্থিত ছিলেন সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী বঙ্কিম হাজরা। নদীতে নতুন করে চর তৈরি হওয়ার খবর পেয়েই বিকেল নাগাদ সোজা কাকদ্বীপের লট নম্বর আট ভেসেল ঘাটে চলে আসেন সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক। লঞ্চে চেপে নদীতে সেই চর পরিদর্শনের পাশাপাশি রাতে দীর্ঘক্ষণ মুড়িগঙ্গা নদীতে জল মাপার পাশাপাশি চলল পর্যবেক্ষণ। পরে মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক ও বঙ্কিম হাজরা সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন।
শুক্রবার থেকে অতিরিক্ত পলি কাটার যন্ত্র কাজ করার নির্দেশ দিয়ে পার্থ ভৌমিক জানান, ‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গঙ্গাসাগরে আসা পুণ্যার্থীদের কোথাও কোনো রকম যাতে অসুবিধা না হয় সেদিকটা কড়া নজরে রাখেন। তাই মেলার প্রস্তুতির মধ্যে মুড়িগঙ্গা নদী পারাপারে তীর্থযাত্রীদের সুবিধার্থে লঞ্চে চেপে ড্রেজিংয়ের কাজ খতিয়ে দেখলাম। ড্রেজিংয়ের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেছিল। এরমধ্যে নতুন করে নদীতে চর খুঁজে পাওয়া গেছে। মেলা চলাকালীন যাত্রী পারাপারে ভেসেল চলাচলে যাতে কোন সমস্যা না দেখা দেয় সেদিকটা মাথায় রেখে আরও বেশ কয়েকটা ড্রেজিং মেশিন লাগিয়ে মেলা শুরুর আগে পর্যন্ত নদীতে ওই নতুন চরকে কেটে সরিয়ে দেওয়া হবে। সেচ দপ্তর ও জেলা প্রশাসন সমন্বয় রেখে দ্রুত গোটা কাজটাই সম্পন্ন করবে।’ ভেসেলের কর্মীদের মুখেও শোনা গিয়েছে আশঙ্কার কথা।
এক ভেসেল কর্মী সৌমেন মাইতি জানান, ‘ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে নদীর পলি কাটা শেষ করার কথা থাকলেও অনিশ্চতায় তৈরী হয়েছে। মকর সংক্রান্তিতে সাগরমেলায় লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থী আসবে সারা দেশ থেকে। পুণ্যার্থীদের যাতায়াতের অন্যতম ভরসা মুড়িগঙ্গা নদী। দীর্ঘদিন ধরে এই নদীতে পলি জমতে থাকায় ভাটার সময় যাত্রী পারাপারের ভেসেল বন্ধ রাখতে হচ্ছে। জোয়ারের সময় নদীর জলের নাব্যতা থাকে প্রায় সাত মিটারের বেশি। কিন্তু ভাটার সময় নদীর জলের নব্যতা কমে দাঁড়ায় আড়াই মিটারেরও কম। ভেসেল চালাতে গেলে নদীতে জলের নাব্যতা থাকতে হবে ন্যূনতম আড়াই মিটার। তার উপর নদীতে নতুন করে চড়া পড়ে যাওয়ায় চিন্তা তৈরি হয়েছে। এখন সমস্তটাই প্রশাসনের সিদ্ধান্তের উপর দাঁড়িয়ে আছে।’ মেলা শুরুর দিন কুড়ি আগেও গড়ে ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ভেসেল বন্ধ রাখতে হচ্ছে। প্রতিদিন চরম হয়রান হতে হচ্ছে সাগরের বাসিন্দা থেকে তীর্থযাত্রীদের।