বন্দনা ভট্টাচার্য্য, হুগলী : বাংলার মাটি আজ কলুসিত। সমাজের কিছু মানুষের আচরণে আমরা লজ্জিত। নিজের মনকেই প্রশ্ন করি,কোন সমাজে আমরা বাস করছি। পাঠকরা ভাবছেন তো হঠাৎ এমন প্রশ্ন কেন? বতর্মানে সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে আমরা ঘরে বসেই অনেক অজানা তথ্য দেখতে পাই। জানতে পারি অনেক কিছু। এমনই একটি ছবি সোশ্যাল মিডায়ায় ছড়িয়ে পরেছে।
সাহিত্যক শরৎ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মূর্তির গলায় বাঁশ বাধা রয়েছে দড়ি দিয়ে। পূজো হবে তাই রাস্তার বন্ধ, এটা বোঝাতে কথা সাহিত্যিক শরৎ চন্দ্র চট্যোপাধ্যায়ের মর্মর মূর্তির গলায় দড়ি দিয়ে বাঁশ বাঁধা হয়েছে। জানতে চান এই লজ্জা জনক ঘটনা কোথায় ঘটেছে? যেই জেলায় কথা শিল্পী জন্মেছিলেন। যেই জেলায় তাঁর পৈত্রিক ভিটে। সেই হুগলী জেলার ভদ্রেশ্বরের ঘটনা। সামনেই জগধাত্রী পূজো। হুগলী জেলার বিভিন্ন পূজো প্যান্ডেলে জোর কদমে চলছে তারই প্রস্তুতি। ভদ্রেশ্বরের শরৎ সরণীতে একটি পূজোর প্যান্ডেল তৈরী হচ্ছে রাস্তা জুরে। তাই রাস্তা বন্ধ থাকবে পূজোর কয়েক দিন। এটা বোঝাতেই শরৎ চন্দ্রের আবক্ষ মূর্তির গলায় দড়ি দিয়ে বাঁশ বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এই দৃশ্য কার্যত বুঝিয়ে দিচ্ছে বাঙালি তার গৌরব ভুলেছে। ভুলেছে নিজেদের ভাষা, কৃষ্টি। সংস্কৃতিকে নীচে টেনে নামিয়ে এনেছে। বেড়েছে চুরান্ত উন্মাদনা। পুঁথিগত শিক্ষা যদিও থাকে, সামাজিক শিক্ষার অভাব দেখা দিয়েছে।
ভাইরাল হওয়া এই ছবি দেখার পর সেখানে গিয়ে দেখা যায় বাঁশ আর দড়ি খুলে নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় মানুষ এবং জনপ্রতিনিধিরা এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হলেও সংবাদ মাধ্যমের সামনে মুখ খুলতে চাননি। হয়ত প্রতিবাদের ভাষা হারিয়ে ফেলেছে এই নির্লজ্জ সমাজ। চোখের সামনে এমন একটা ঘটনা দেখে নিশ্চুপ থাকতে বিবেকে বাঁধলোনা? এই প্রশ্নের উত্তরে স্থানীয় এক মাঝবয়সী ব্যক্তি বললেন, প্রতিবাদ করলে যদি অপমান করে, অসম্মান করে, তাই বলতে সাহস হয়নি। অপমান? অসম্মান? নিজের জেলাতেই বাংলার স্বনামধন্য সাহিত্যিকের এই চুরান্ত অবমাননা দেখেও যে সমাজের বুদ্ধিজীবী মানুষগুলো চুপ থাকতে পারে, আদৌও কি তারা মান অপমান বা সম্মান অসম্মানের পার্থক্য বোঝে? এর চেয়ে অপমান, অসম্মানের দিন বাঙ্গালীর কাছে আর কি হতে পারে? প্রতিবাদ না করলে সমাজের এই অবক্ষয় উত্তোরোত্তর বৃদ্ধি পাবে। আগামী প্রজন্ম কি শিক্ষা নেবে নক্কার জনক এই ঘটনা থেকে? স্থানীয়দের কাছ থেকে এর কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।